রাজাপুরে ৩ প্রতিবন্ধীর ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ

প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর ২০২০

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির রাজাপুরের গালুয়া ইউনিয়নের ৫ নং পুটিয়াখালী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে ৩ জন প্রতিবন্ধীর ৩ মাসের মাসিক ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পুটিয়াখালি গ্রামের আঃ সোবাহান হাওলাদারের মেয়ে ছোট মেয়ে রেকসনা স্থায়ী মানসিক প্রতিবন্ধী। তিনি নিজে স্ট্রোক করে দীর্ঘদিন ধরে বিছানায়। একমাত্র ছেলে মাথায় টিউমার হয়ে মারা গেছেন। বড় মেয়েও স্ট্রোক করায় ২ সন্তান নিয়ে পিতার সংসারেই আছেন। ঘরটিও জরাজীর্ণ। রেকসনার মা হনুফা বেগম ভিক্ষা করে সংসার চালান।

পরিবারের অসহায়ত্ব দেখে সাবেক ইউপি সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে রেকসনাকে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেন। কার্ডটি রেকসনার মা হনুফা বেগমের হাতে দিয়ে বর্তমান ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন মোল্লার মাধ্যমে ভাতা সুবিধা নেয়ার বই ইস্যু করতে পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী বর্তমান ইউপি সদস্যের কাছে কার্ডটি দিলে রেকসনাকে ব্যাংকে নিয়ে একাউন্ট করান। একাউন্ট করানো বাবদ টাকা চাইলেও ভিখারিনী হনুফা বেগম তা দিতে পারেননি। হনুফা বেগমের অভিযোগ, ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন মোল্লা গত জুলাই মাসে রেকসনার প্রতিবন্ধী ভাতার ৯ হাজার টাকা উত্তোলন করে হনুফা বেগমকে ৩ হাজার টাকা দেন।

বাকি ৬ হাজার টাকাই আত্মসাত করেন তিনি। ভাতার সব টাকা পায়নি বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ। এমনকি এখনও বইও তাদের দেয়া হয়নি। একই গ্রামের মুনসুর আলীর ছেলে খোকন ছোটবেলা থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধী। খোকন থাকেন বোন শাহিদা বেগমের কাছে। খোকনের প্রতিবন্ধীর ভাতা বাবাদ একটি টাকাও পায়নি। শাহিদা বেগম অভিযোগ করে জানান, পুরান (সাবেক) আমিন মেম্বর আমার ভাই খোকনকে প্রতিবন্ধীর কার্ড করিয়ে দেন। কার্ড নিয়ে বর্তমান মেম্বর ফারুক মোল্লার কাছে গেলে কোন টাকা পয়সা আসেনি জানিয়ে ব্যাংকে নিয়ে টিপসহি রেখে একটি একাউন্ট করে দেন। অনেক মানুষের কাছেই শুনেছি যারা প্রতিবন্ধী তাদের ভাতা’র টাকা পেয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি ভাই খোকনের নামে যে টাকা আসছে তা ৩ মাস আগেই উঠিয়ে নিছে ফারুক মোল্লা। তারপর আমরা ওর নামের কাগজপত্র উঠিয়ে দেখি ওর নামের টাকা সেই তুলে নিছে। ফারুক হোসেন মোল্লার কাছে গেলে তিনি টাকা আসলেই পাবেন বলে জানিয়ে দেন। অপর আরেক মানসিক প্রতিবন্ধী মীর ইউনুছ আলী। থাকেন ভাই মীর আফজাল হোসেন’র কাছে। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার কোন বুদ্ধি বিবেচনা নাই। আফজাল হোসেনই তাকে দেখাশুনা করছেন। আফজাল হোসেনের অভিযোগ, মীর ইউনুছ আলীর কার্ডটি এক্টিভ করতে বর্তমান ইউপি সদস্য ফারুক মোল্লার কাছে গেলে তিনি ভাতা বই করার জন্য ৩ হাজার টাকা নেয়। পরে আবার ব্যাংকে একাউন্ট করতে ৫শ’ টাকা নেয়।

এরপর থেকে যতবারই তার কাছে খোজ নিতে যাই ততবারই তিনি পিঠে হাত দিয়ে আসতেছে, আসলেই পাবেন বলে জানান। পরে খোঁজ নিয়ে জানি সব টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন মেম্বরে। শ্রমজীবী বেলায়েত হোসেন’র স্ত্রী রেহেনা বেগম অভিযোগ করেন জানান, ফারুক মেম্বর ভিজিডি কার্ড করার কথা বলে ৩ হাজার টাকা চাইলে তাকে ২৫শ টাকা দেয়া হয়। ২ বছর মেয়াদী কার্ডের ৩ বছর অতিবাহিত হলে এখনও কোন কার্ড পাইনি। মেম্বরের কাছে গেলে সবসময়ই শান্তনা দিয়ে পাঠিয়ে দেন। শুধু প্রতিবন্ধী রেকসনা, খোকন, ইউনুস এবং বেলায়েতের টাকাই না, এভাবে আরো অনেকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে এ ইউপি সদস্যের ফারুক হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আত্মসাতকারী ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন মোল্লার বিচার দাবী করছেন।

তবে অভিযুক্ত ৫ নং পুটিয়াখালী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন মোল্লা টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়টি সম্পুর্ণ অস্বীকার জানান, রেকসনা, খোকন এবং ইউনুসের টাকা তাদের স্বজনরা উত্তোলন করে নিয়েছে। স্থানীয় প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। তার ওয়ার্ডের সরকারী সুবিধাপ্রাপ্ত সকলকেই সুষম বণ্টন করছি। যার যেভাবে প্রাপ্য তাকে সেভাবেই দিয়েছি। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন জানান, প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকে ভাতাভোগী নিজে উপস্থিতি থেকে টাকা উত্তোলন করার নিয়ন। আর যদি সে উপস্থিত হতে না পারে তাহলে নমিনি সমাজসেবা অফিস মনোনয়ন করে দিবে, সে উঠাবে। অন্য কাউকে টাকা না দেয়ার জন্য ব্যাংকে বলে দেয়া হয়েছে।

 

আপনার মতামত লিখুন :