বিনোদনের মানুষগুলোর গুরুত্ব যেথা বেশি

প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০২২

আমাদের জীবনে সত্যিকারের আনন্দিত হতে পারার মাত্রা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমরা নিজের মধ্যে, আশেপাশের মানুষ নিয়ে সুখানুভূতি সৃষ্টি করতে পারছি না। এর কারণ বহুমাত্রিক! সেখানে যেমন অর্থনৈতিক দৈন্যদশা আছে তেমনি সামাজিক অবক্ষয়ের প্রভাব ব্যাপক। থাক সেসব তাত্ত্বিক কথা!

আমরা দলবেঁধে হিরো আলমের মধ্যে সুখ খুঁজি, পূর্ণিমার বিয়েতে মুষড়ে যাই! মাহফুজুর রহমানের গান না শুনলে প্রাণ হাঁসফাঁস করে! আবার হিরো আলমকে রবীন্দ্র গানের জন্য আইনি নোটিশ দিয়ে নিজেদের দেউলিয়াত্বের ঘোষণা দেই! আমরা পারি বটে! চলমান সার্কাস সাথে নিয়ে ঘুরি-ফিরি!

আমরা যে এমন হাস্যকর কার্যকলাপে জড়াবো তা মহামতি প্লেটো বহু আগেই আন্দাজ করেছিলেন! তিনি বলেছেন, ‘ আমাদের চারপাশের বিনোদন দেয়া মানুষগুলোর গুরুত্ব আমরা প্রয়োজনের তুলনায় শতগুন বাড়িয়ে দিয়েছি আর যারা রাত-দিনের ক্লেশে সমাজ-সংসার টিকিয়ে রাখার তত্ত্ব-যন্ত্র আবিষ্কার করে তাঁদেরকে শ্লেষে এড়িয়ে গেছি!’

আমাদের জীবনের ফিলোসফি শোনায় সুখন, আর বিনোদনের নাম সুমন! এমন অজ্ঞের হাতে মাইক ধরিয়ে জীবনে সাফল্য মন্ত্র লাভে লাইন ধরেছি সে জীবনের মানেই জানে না! বড়জোর তাকে জীবনের ভাড়াটে ভাঁড়ার বলা চলে!

বহুমাত্রিক প্রতিভাধর হুমায়ুন আজাদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা মেধাবী ছেলে আর মেয়েটি, সেরা বিজ্ঞানী আর জীবন বাঁচানো ডাক্তারের তুলনায় আমাদের তারকা আর রোল মডেল হচ্ছে- হাজারো স্ক্যান্ডালে জড়ানো আর পোষাকের বালাই না থাকা অভিনয় না জানা নায়িকা কিংবা ম্যাচের পর ম্যাচ ফ্লপ ক্রিকেটার।’ রনবীর সিংয়ের ঠিকুজি খোঁজায় বড্ড ব্যস্ত আছি! ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি দলিত সম্প্রদায়ের দ্রৌপদী মুরমু’র জীবনী একবারও তালাশ করিনি! বুকে হাত দিয়ে বলেন, কোথাও খুঁজেছেন?

অবাক শোনালো? টিকটকাররা এই সমাজের ছেলে মেয়েদের আদর্শ! কে কয়টা বিয়া করলো, আর বিয়া ভাঙলো সে নিউজেই ইলেকট্রনিক আর প্রিন্ট মিডিয়ার ফোকাস বেশি! তাদের দোষ দিয়েই বা কি হবে! পাঠকসমাজ, দর্শকসমাজ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে! পড়ে ও দেখে কী যেন সূখ সূখ পায়! স্বর্গসুখের আর দরকার কী! অনন্ত আর বর্ষা রোজ অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প শোনায়! আমরা ঘাম মোছানো দেখে আকুল হিয়া ব্যাকুল করি! আহা! কতো যে শান্তি!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসাধারণ কোন লেখা কিংবা জীবন বদলে দেয়ার মত ভিডিওতে লাইক টেনেটুনে ১০০ পেরুতে দিন দুয়েক লেগে যায় অথচ বুক আর কোমড়সহ কোন লাস্যময়ীর ছবিসহ তার কপিকৃত ফিলোসফি, কিংবা বস্তাপঁচা কবিতা কিংবা আমার স্বামী নাই আমাকে সামলাও! টাইপের লেখা-ছবিতে যে পরিমান কমেন্ট আর লাইক হয়, অতো কমেন্ট আর লাইক উগান্ডার প্রেসিডেন্টের নির্বাচিত হতেও লাগে না! K ছাড়িয়ে M! আর প্রত্যেকটা M-ই আমাদের পঁচে যাওয়া বিবেকবোধ ও রুচিবোধের সাক্ষ্য দেয়!

তরুণ-যুব এমনকি ভীমরতিতে আচ্ছন্ন বুড়োরা ছবি পেলেই হলো, নারী পেলেই ডুবলো-সব আকর্ষন ছবিতে, তার কবিতা কে পড়ে! এই সমাজে কোন মেধাবী, কোন পরিশ্রমী-কারো রোল মডেল নয়! অলি-গলির বাইকার, অক্সিজেন খাওয়ার চেয়ে যে বেশি গাঁজা খায়, আর যার পেশীর ক্ষমতা আছে সেই সবার আইডল!

খেসরাত দেখতে বেশি সময় লাগবে না! প্রার্থণা করে আর ১০ বছর বাঁচার আয়ু কামাই করেন। বহুকিছুই দেখতে পাবেন। এর আগে মরে গেলে অবশ্য বেঁচে গেছেন!

 

 

রাজু আহমেদ।

raju69alive@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :