মিয়ানমারের গোলাবর্ষণে বাংলাদেশের সীমান্তঞ্চলে বাড়ছে উত্তেজনা
প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
বান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমারের গোলাবর্ষণে উত্তেজনা বাড়ছে সীমান্তঞ্চলে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গোটা ঘুমধুম ইউনিয়ন জুড়েই থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সীমান্তবাসীদের চলাচলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বিজিবি। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে ঘুমধুম তমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মিয়ানমারের মর্টারশেল নিক্ষেপের শব্দে কেপে উঠেছে ঘুমধুম সীমান্তঞ্চল।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন তিবরিজী সোমবার ভোরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সেখানে গিয়ে পরিদর্শন করে তিনি ঘুমধুম তমব্রু সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া সংলগ্ন তমব্রু, ঘুমধুম, হেডম্যান পাড়া, রেজু আমতলীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় বাংলাদেশিদের অন্যত্রে সরানোর সরকারি সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন।
স্থানীয়রা এলাকাবাসীরা জানায়, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মি (এএ) সশস্ত্র বাহিনীর সাথে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কয়েকমাস ধরেই গোলাগুলি এবং মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনাগুলো চলছে। আরাকান আর্মি (এএ) সশস্ত্র সংগঠনের আস্তানা ধংসে মিয়ানমার সরকার বাহিনী যুদ্ধ বিমান এবং ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকেও হামলা চালানো হচ্ছে।
সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে গোলা নিক্ষেপ এখনো অব্যাহত রয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ঘুমধুম সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশীরাও। মিয়ানমারে চলমান সংঘাত এবং সীমান্তে উত্তেজনায় সীমান্তঞ্চলে বসবাসকারী অনেক বাংলাদেশী বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে স্বজনদের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
এ দিকে নোম্যান্স ল্যান্ড শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের তাড়াতেই মর্টারশেল হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন শূন্যরেখার আশ্রয় শিবিরের দলনেতা দিল মোহাম্মদ। তিনি বলেন, শূন্যরেখায় আশ্রয় শিবিরে প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করে। ভয়ে আতঙ্কে শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের অনেকেই কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে গেছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা পুনরায় ফিরবে। মিয়ানমার বাহিনীরা শূন্যরেখার ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতেই মূলত ভিন্ন কৌশলে হামলাগুলো চালাচ্ছে। তবে শূন্যরেখা রোহিঙ্গারা নানা কৌশলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস দৈনিক অধিকারকে বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি বর্ষণের ঘটনা চললেও সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ বিষয়ে গত সোমবার উপজেলা পর্যায়ে আমার একটা মিটিং করেছি। আমাদের জেলা প্রশাসক মহোদয় ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শনের লক্ষে সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সফর করবেন। সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের আতঙ্কিত না হতে মাইকিং করা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আনসার সদস্যরা স্থানীয়দের আশ্বস্ত করছেন আতঙ্কিত না হতে।
ইউএনও আরও বলেন, ঘুমধুম সীমান্তে মর্টারশেল গোলা পড়ে বিস্ফোরিত হয়ে রোহিঙ্গার মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কে অনেকে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু পরবর্তীতে তারা পুনরায় নিজের বাসাবাড়িতে ফিরেছে।