রহিমার নিখোঁজ নাটকের পুরোটাই সাজানো?
প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
অবশেষে অপহরণ ও লাশ উদ্ধার নাটকের অবসান হয়েছে। স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকা খুলনার বহুল আলোচিত রহিমা বেগমকে ফরিদপুরের একটি বাড়ি থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ২৮ দিন আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। ব্যবহার করেননি মোবাইল ফোন।
দৌলতপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এরপর রাত ২টার দিকে তাকে নিয়ে আসা হয় দৌলতপুর থানায়। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন- রহিমা বেগম ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে রয়েছেন।
আরও খোঁজ নিয়ে তারা বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এরপর দৌলতপুর জোনের এডিসি আবদুর রহমান ও দৌলতপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই বাড়িতে পৌঁছায়। পুলিশ দেখে, রহিমা ওই বাড়িতে বসে দুই নারীর সঙ্গে গল্প করছেন।
সেখানে রহিমা বেগমকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। তবে ওই বাড়ির বাসিন্দারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, রহিমা তাদেরকে জানিয়েছেন তিনি বেশ কয়েকদিন চট্টগ্রাম ও মোকসেদপুরে ছিলেন। এরপর ১৭ আগস্ট বোয়ালমারীতে কুদ্দুসের বাড়িতে যান। তখন তার একটি ব্যাগে ২ প্যাকেট বিস্কুট, কিছু কাগজপত্র ও পরনের কয়েকটি কাপড় ছিল।
জানা যায়, রহিমা যে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে ছিলেন, সেই কুদ্দুস বেশ কয়েক বছর আগে খুলনার সোনালি জুট মিলে চাকরি করতেন। তখন রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। পরে তিনি বোয়ালমারীতের চলে যান। বেশ কিছুদিন আগে রহিমার ছেলে একবার কুদ্দুসের বাড়িতে বেড়াতে যান।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা রহিমা বেগমকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। রহিমা বেগম কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি। সে কারণে ট্রাকিং করা সম্ভব হয়নি। রহিমা অপহরণ মামলাটির তদন্ত দৌলতপুর থানা পুলিশের কাছ থেকে পিবিআইতে গেছে। তারপরও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ মামলাটির ছায়া তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল। পিবিআই তদন্ত করে দেখবে রহিমা বেগম কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিল এবং কোথায় কোথায় ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুদ্দুসের ছেলে আলামিন, কুদ্দুসের স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।
রহিমা আসলেই অপহরণ হয়েছিলেন নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বলেন, এটা পিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের মাধ্যমে বিস্তারিত উদঘাটন করে জানাবে। এদিকে ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা এলাকায় উদ্ধার হওয়া এক নারীর মরদেহ রহিমা বেগমের বলে ২২ আগস্ট ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। পরদিন ফুলপুর থানায় গিয়ে তিনি ছবি দেখে ও নিহতের পায়জামা দেখে ওই লাশ তার মায়ের বলে দাবি করেন। তিনি লাশের ডিএনএর সঙ্গে তার ডিএনএ মিলিয়ে দেখারও আবেদন করেন।
অপরদিকে শনিবার মধ্যরাতে মরিয়ম মান্নান ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, মাকে উদ্ধারের খবর পেয়েছি। আমার থেকে খুশি এই মুহূর্তে কেউ নেই। আমি এই মুহূর্তে খুলনা যাচ্ছি। তবে দৌলতপুর থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রহিমা ও তার মেয়েরা অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। তিনি মূলত স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন।
রহিমা বেগমের সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা-এ প্রশ্নের উত্তরে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘মামলাটি যেহেতু পিবিআই তদন্ত করছে, ফলে বাকি কাজ তারাই করবে।