আগামীকাল থেকে মোট ২২ দিন গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ কুয়াকাটায়
প্রকাশিত : ৬ অক্টোবর ২০২২
আগামী ০৭ অক্টোবর ২০২২ (২২ আশ্বিন ১৪২৯, শুক্রবার)। থেকে ২৮ অক্টোবর ২০২২ (১২ কার্তিক ১৪২৯, শুক্রবার) পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকবে। এ সময় দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহণ, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে।মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এ তথ্য জানার পর থেকেই মহিপুর, কুয়াকাটার জেলে পল্লীতে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ করার পরিকল্পনা নিচ্ছে, আজ ৬অক্টোবর কুয়াকাটার ক্ষুদ্র জেলে পল্লীগুলোতে দেখা মিলছে গভীর সমুদ্র থেকে গুছিয়ে নিচ্ছে জাল পালা, কেউবা মাহাজনের সাথে সব হিসাব-নিকাশ সেরে নিচ্ছে, মহিপুর আলিপুর মৎস্য বন্দর গভীর সমুদ্রে থাকা জেলেরা মন কে মন ইলিশ নিয়ে ঘাটে চলে আসছে , শেষ মুহূর্তে জমজমাট হয়ে উঠেছে মৎস্য আরত পট্টি, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মাহাজন সহ সকল জেলেরা।
কুয়াকাটার পুরো এলাকাজুড়ে জেলেপল্লী গুলো ব্যস্ত হয়ে পরছে, দেখা মিলেছে কেউ নৌকা ঠিক করছে বা অন্য কেউ জাল পালা গুছিয়ে নিচ্ছেন, লক্ষ করে দেখা গিয়েছে একজন লোক এক এক কাজে ব্যস্ত রয়েছেন, সবার মনোবল ও বুকের আশা পুষে রেখেছেন, অতি তাড়াতাড়ি সবকিছু গুছিয়ে আরামে থাকবে ৷
তবে এখন যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে সব মাছে দেখা মিলছে পেট ভরা ডিম। এই অবরোধ যুক্তিসম্মত মনে করছে জেলেরা, সকল জেলেরা বলছে, কিনারায় মাছের রাজা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য ইতিমধ্যেই চলে এসেছে, তাই শেষ মুহূর্তে জাল উঠানোর সময় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে, তারা ধারণা করছেন অবরোধের নিষেধাজ্ঞ তা উঠে গেলে অনেক মাছ ধরা পড়বে বাংলাদেশের জেলেদের জালে, তবে এই কথার ফাঁকে জেলেদের ক্ষোভ রয়েছে ।
কুয়াকাটা জেলেপল্লীর জেলে দেলোয়ার মোল্লা বলেন, আমরা গভীর সমুদ্রের মাছ শিকার করে থাকি, আমরা সব সময় সরকারি নির্দেশ নির্দেশনা মেনে চলি, তারই ধারাবাহিকতায় এই ২২ দিন অবরোধ আমরা মেনে সাগর থেকে আমাদের সংসার তুলে নিয়ে এসেছি, একই সময় মনির বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের নিজেদের সকল মালামাল গুছিয়ে নিয়েছি, সমুদ্র থেকে মাছ ধরার সকল সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়েছি, সুন্দরভাবে ২২ দিন পরে আবারো গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকার করার পরিকল্পনা করছি, এবং মাহাজনের সাথে আমরা হিসাব নিকাশ সেরে ফেলেছি ৷
কুয়াকাটার মৎস্য আরধ আল্লাহর দান ফিশ এর ম্যানেজার মোঃ রুবেল বেপারী বলেন, আমরা জেলেদের সাথে সব হিসাব-নিকাশ করেছি, আমাদের কাছে যে টাকা পাওনা ছিল সব জেলেদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ফিশের মাহাজন, শাহ আলম হাওলাদার বলেন,৬৫দিন অবরোধ এর পরে জেলেদের জালে প্রচুর মাছ শিকার হয়, মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে তখনই এই ২২দিনের অবরোধ চলে এসেছে তবে এই ২২ দিনের অবরোধ টি যুক্তিসম্মত, কিন্তু ৬৫দিনের অবরোধ দেয়ার কোনো যুক্তি দেখছে না তারা।
মহিপুর মৎস্য বন্দরের জেলে, হারুন আকন বলেন, সরকারি নির্দেশ আমরা সমুদ্র থেকে ঘাটে চলে এসেছি, আসার পথে অনেক মাছ পেয়েছি সব মাছের পেটে ডিম রয়েছে। আমাদের ধারণা ২২ দিনের অবরোধ শেষে সাগরে অনেক মাছ হবে, এবং অবরোধ শেষে মৎস্য শিকার করতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছে। একই সময় মনের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মোহাম্মদ সোহেল মাঝি, তিনি বলেন আমাদের অবরোধ দেওয়া হচ্ছে, আমরা সরকারি নির্দেশ মানছি,তবে ফাঁকা মাঠে গোল দিচ্ছে ভারতের জেলেরা, আমরা যখন সরকারি নির্দেশ মেনে নিয়ে ঘাটে চলে আসি তখন ফাঁকা মাঠে ভারতের জেলেরা আমাদের মাছ শিকার করে নিয়ে চলে যায়। তিনি সাথে সাথে সরকারের কাছে এর সমাধান চায়, এই অবরোধে ভারতের জেলেরা বাংলাদেশে ঢুকে মাছ ধরা নিষেধ করার এবং ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায়।
কুয়াকাটা আশার আলো জেলে সমবায় সমিতি সভাপতি নিজাম শেখ বলেন, কুয়াকাটার জেলেরা সবসময় সরকারি নির্দেশ মানছেন। আলিপুর মৎস আরদ এর সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ইতিমধ্যেই গভীর সমুদ্রে থাকা ট্রলার ঘাটে চলে এসেছে তাদের নিজেদের হিসাব নিকাশ সবকিছুই করে নিয়েছে সরকারি নির্দেশ মানছে এবং ২২ দিনের অবরোধ কাটিয়ে আবারো সমুদ্রে মাছ শিকার করবে জেলেরা।
কুয়াকাটা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মো: মনির শরীফ বলেন, কুয়াকাটা পৌরসভা থেকে জেলেদের সব সময় সহযোগিতা ও ভালো পরামর্শ দিয়ে থাকে, সরকারি তহবিল থাকছে জেলেদের জন্য চাল দেওয়া হয়, তারই ধারাবাহিকতায় এবারও অবরোধে সরকারি সহযোগিতা থাকবে কুয়াকাটার জেলেদের জন্য। এবং সব সময় জেলেদের সুখ দুঃখে কুয়াকাটা পৌরসভা তাদের পাশে রয়েছে।
জাহিদুল ইসলাম জাহিদ,
কুয়াকাটা প্রতিনিধি ।