ময়মনসিংহে বিএনপির সমাবেশে মধ্যরাত থেকেই নেতাকর্মীদের ঢল
প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর ২০২২
ময়মনসিংহের বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগযোগ বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যেই নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন। সমাবেশ সফল করতে শুক্রবার রাতেই নগরীতে অবস্থান শুরু করেন অনেকে। কেউ ট্রেনে, কেউ নদী পথে, কেউ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সমাবেশ স্থলে আসেন। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সকাল থেকেই নগরীর চরপাড়া ও মাসকান্দা এলাকা দখলে নেয় বিএনপি। তবে আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে অবস্থান করতে দেখা যায়নি।
আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়, মাসকান্দা বাস টার্মিনাল ঘুরে কোনো ধরণের বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। তবে স্বল্প পরিসরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছিল। শহরে কিছু রিকশাও চলতে দেখা যায়। মাসকান্দা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে ড্রেনের স্লাবের ওপর পাটি পেতে ঘুমাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা সড়কের পাশেই রাত্রিযাপন করেন। চরপাড়া থেকে মাসকান্দা পুরো এলাকা জুড়ে মেলে অভিন্ন চিত্র। বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দখলে পুরো এলাকা।
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা যুবদল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘ঢাকাগামী যমুনা ট্রেন দিয়ে ভোর ৫টায় নিজের শতাধিক লোক নিয়ে সমাবেশস্থলের কাছে এসেছি। সমাবেশ সফল করে বাড়ি ফিরবো। জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা সড়কের পাশে ঘুমাচ্ছিলেন। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আশিকুর রহমান দোলন বলেন, ‘সরকারী বাহিনী সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে নিজের নেতাকর্মীদের নিয়ে শুক্রবার রাত ১২টায় সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য এসেছি।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের পাছদরিল্লা গ্রামের যুবদল নেতা রহমত উল্লাহ বলেন, ‘বাস বন্ধ করে দেওয়ায় তারা কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। নেতাকর্মীরা বালিপাড়া হয়ে নৌকায় সমাবেশে এসেছে। নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক শতাধিক লোক নিয়ে শহরের পাদ্রী মিশন রোড এলাকা থেকে সমাবেশ স্থলে হাজির হন। আনোয়ারুল হক বলেন, ‘শুক্রবার থেকেই বাস বন্ধ। পথে পথে বাধা। তারপরও নিজের নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে শুক্রবার রাতের মধ্যে ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছেছি। কোনো বাঁধা তাদের আটকাতে পারেনি।’
সমাবেশ স্থলেও কয়েক হাজার লোক প্রচণ্ড রোদের মধ্যে মঞ্চের সামনে অংশে পলিথিন কাগজ পেতে বসে পড়েন। স্লোগানে-স্লোগানে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয় পুরো সমাবেশস্থলে। সবার মুখে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘সব দিকে হরতাল চলছে। নেতাকর্মীদের আসতে দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা হেঁটে সমাবেশের দিকে আসছেন। অনেক স্থানে হামলা করা হয়েছে। নগরীর হোটেল মোস্তাফিজে নেতাকর্মীরা অবস্থান করায় সেখানে ককটেল বিস্ফোরণ, তাদের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তবুও সব বাধা অতিক্রম করে সকাল থেকে সমাবেশ স্থল ভরে উঠেছে।
খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরও বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে- স্থানীয় কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমানের। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম। পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ সফল করতে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন।
সমাবেশকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা শুরু হয় ময়মনসিংহ শহরে। শুক্রবার মহানগর আওয়ামী লীগ নগরীল রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। আজও জেলা আওয়ামী লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগ মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দের বাসায় হামলার চেষ্টা করা হয়, শুক্রবার দুপুরে নতুন বাজার এলাকার পার্টি অফিসকে ঘিরে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতারা মোটরসাইকেল দিয়ে মহড়া দেন, সন্ধ্যায় টাউনহল এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় অন্তত চার জন আহত হন।