ইউরোপে তিন মাসে পাঁচশ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি
প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০২২
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো। বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিচ্ছে বলে উল্লেখ করছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। বৈশ্বিক এ সংকটের মধ্যেও ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে। তবে আগামীতে রফতানির এ ধারা ধরে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে বাংলাদেশ ৪৯৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রফতানি করেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য দেশভিত্তিক রফতানির হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ইপিবির তথ্য বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি হয়েছে ৪ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে জার্মানিতে পোশাক রফতানি ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে ১৫২ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া, স্পেনের বাজারে ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও ফ্রান্সের বাজারে রফতানি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। তবে ইইউর অন্যতম সম্ভাবনাময় বাজার পোল্যান্ডে রফতানি জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ২৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ২০১ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা, আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এটি প্রবৃদ্ধি হ্রাসের একটি স্পষ্ট লক্ষণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্ততকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল।
তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়ছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে স্পষ্ট বলা যায়, পরবর্তী মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানিসহ প্রধান বাজারগুলোতে রফতানি কমবে।
ইপিবির পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে, অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে ১৭৬ কোটি মার্কিন ডলার হয়েছে। রফতানির এই অংক আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৪৩ কোটি ডলার।
অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে, জাপানে রপ্তানি ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে ৩২ কোটি ৪০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। ভারতেও বাংলাদেশের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে ৬৬ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়ে ৩০ কোটি ৬৪ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
অন্য দিকে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং রাশিয়ায় রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ০ দশমিক ১৩ শতাংশ, ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ৪৭ দশমিক ৩০ শতাংশ।
এ দিকে মহামারি করোনার প্রভাব থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ১৩ মাস পর গত সেপ্টেম্বর বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে ভাটা পড়েছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দেশের পণ্য বিশ্ববাজারে রফতানির বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৯০ কোটি ডলার। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় হয়েছিল ৪১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৫ ডলার। সেই হিসাবে আগের বছরের চেয়ে আয় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে।
ইপিবির সেক্টর ওয়াইজ ডাটা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে ৩১৬ কোটি ১৬ লাখ ৭ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৩৪১ কোটি ৮৮ লাখ ৪ হাজার ডলার আয় হয়েছিল। অর্থাৎ গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে। ওভেন ও নিটওয়্যার- উভয় ধরনের পোশাক রফতানিই কমেছে।
খাত সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা বলছেন, সেপ্টেম্বর থেকে যে প্রবৃদ্ধিতে মন্দা হবে, সে বিষয়ে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল বিজিএমইএ। সেপ্টেম্বরের রপ্তানি পরিসংখ্যানে আশঙ্কা স্পষ্টতই প্রতিফলিত হয়েছে।
২০২১ সালের জুলাই মাসে পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছিল ২৮৮ কোটি ৭২ লাখ ২ হাজার ডলার, যা ২০২০ সালের জুলাই মাসের চেয়ে ১১ দশমিক ২ শতাংশ কম। সে হিসাবে ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ ১৩ মাস পর রফতানি আয় কমল।