ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূল হোতাসহ ৫ জন গ্রেফতার
প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর ২০২২
রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে দেশব্যাপী টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতা সেলিমসহ মোট পাঁচজন সক্রিয় সদস্যদেরকে গ্রেফতার এবং মজুদকৃত বিপুল পরিমান ট্রেনের টিকেট জব্দ করেছে র্যাব-৩।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও টিকিট কালোবাজারি চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র্যাবের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় কালোবাজারি চক্রের সক্রিয় সদস্যরা কাউন্টার হতে এবং অনলাইনে টিকিট ক্রয় করে অধিক মূল্যে বিক্রয় করে আসছে। ঈদকে কেন্দ্র করে এসব চক্রের দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়ায় ইতোপূর্বে ঈদুল আযহার পূর্ববর্তী সময়ে টিকিট কালোবাজারি চক্রের ৬ জন সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করেছিল র্যাব-৩। সাম্প্রতিক সময়ে এ সংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্য এবং অভিযোগের ভিত্তিতে আবারও এই চক্রের মূলহোতাসহ বেশ কয়েকজন কালোবাজারিদেরকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত চলমান র্যাব-৩ এর দুটি পৃথক অভিযানে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা হতে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ সেলিম (৪৮), পিতা-মৃত আঃ রশিদ, সাং-উত্তর সরালিয়া, থানা-মোড়েলগঞ্জ, জেলা-বাগেরহাট, ২। মোঃ শাহ আলম (৩৪), পিতা-মৃত লাল মিয়া, সাং-মজলিসপুর, থানা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৩। মোঃ লিটন (৩৫), পিতা-মৃত আজিজুল হক, সাং-মোল্লাপাড়া, থানা-কিশোরগঞ্জ সদর, জেলা-কিশোরগঞ্জ, ৪। মোঃ আঃ রশিদ ফকির (৩০), পিতা-মৃত আমসের ফকির, সাং-কুড়ির চর, থানা-গৌরনদী, জেলা-বরিশাল এবং ৫। খোকন মিয়া (৫৮), পিতা-মৃত মোকছেদ আলী, সাং-ছোট গাংগাইল, থানা-আখাওড়া, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিকট হতে ট্রেনের ৮৮ টি টিকিট, মোবাইল ফোন ০৪ টি এবং নগদ ১৮,৪৪৭/-টাকা উদ্ধার করা হয়।
রাজধানীর কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনসহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশনে অধিক মুনাফার আশায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের তৎপরতা চালিয়ে আসছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি চক্রটির মূলহোতা সেলিম এবং অন্যান্য সদস্যরা মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাড়িয়ে এক একটি এনআইডি দিয়ে ০৪ টি করে টিকিট সংগ্রহ করে। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও মুঠোফোন নাম্বার ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। এরপর সেলিমের নেতৃত্বে এক একটি ট্রেন ছাড়ার দুই ঘন্টা আগে থেকে তারা অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রির তৎপরতা শুরু করে। ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনাতে থাকে তাদের মজুদকৃত কালোবাজারি টিকিটের দাম তত বাড়তে থাকে। তারা সাধারনত দিগুন মূল্যে টিকিট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। এই চক্রটি মূলত তিস্তা এক্সপ্রেস, এগারো সিন্দুর প্রভাতী, মহানগর প্রভাতী, চট্টলা এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস এবং পারাবত এক্সপ্রেস এই সকল ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে থাকে। এই চক্রটির আরও সদস্য ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে ৫-৭ জন করে সক্রিয় সদস্য রয়েছে যারা তাদের টার্গেটকৃত ট্রেনসমূহের টিকিট কালোবাজারি করে সাধারন যাত্রীদের নিকট চড়াদামে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই সংঘবদ্ধ চক্রটি বিগত ০৭ বছর যাবৎ চক্রের মূলহোতা সেলিম এর নেতৃত্বে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে সাধারন যাত্রীদের নিকট হতে প্রচুর পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়। তারা কমলাপুর রেলস্টেশন হতে বিভিন্ন জেলার রেলস্টেশন গুলোতেও তাদের এজেন্টদের সাথে যোগসাজসের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। রেলস্টেশনে যে পরিমান টিকিট বরাদ্দ থাকে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ বিক্রি হয় অনলাইনে। যার ফলে কাউন্টারে এসে অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান। আর এই সুযোগটিই গ্রহণ করে টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা। কমলাপুর রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি চক্রটির মূলহোতা সেলিম এবং অন্যান্য সদস্যরা মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাড়িয়ে এক একটি এনআইডি দিয়ে ০৪ টি করে টিকিট সংগ্রহ করে। এমনকি অনেক সময় তারা রিক্সাওয়ালা, কুলি, দিনমজুর এদেরকে অল্প টাকার বিনিময়ে লাইনে দাড় করিয়ে তাদের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করে। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। সংগ্রকৃত টিকিট নিয়ে এরা রেলস্টেশনের ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে। এরা রেলস্টেশনে এসে টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের নিকট তাদের কালোবাজারি টিকিট বিক্রির জন্য ঘুরতে থাকে। ট্রেন ছাড়ার ঘন্টা দুয়েক আগে যাত্রী সমাগম শুরু হলে তাদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। তারা তখন দিগুন মূল্যে টিকিট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। এটা তাদের স্বাভাবিক সময়ের কার্যক্রম। কিন্তু ঈদসহ বিভিন্ন ছুটি এবং উৎসবকে কেন্দ্র করে তারা এক একটি টিকিট ৩-৪ গুন বেশি মূল্যে বিক্রয় করে থাকে।
মুলহোতা সেলিম জানায়, তারা গত কোরবানীর ঈদের সময় ৫০০ টাকার টিকিট সর্বচ্চ ২০০০ টাকায়ও বিক্রি করেছে। তারা প্রত্যেকে ৭-৮ বছর যাবৎ এই পেশার মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ এবং যাবতীয় খরচ চালায় বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত মূলহোতা সেলিমের নামে টিকিট কালোবাজারির দায়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোট ০৭ টি মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে ইতোপূর্বে সে জেলও খেটেছে। অপর আসামী শাহআলমের নামে ইতোপূর্বে টিকিট কালোবাজারির ০৩ টি মামলা রয়েছে এবং সে র্যাব-৩ কর্তৃক গত ঈদুল আযহার আগে গ্রেফতার হয়ে ৩৫ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়। ইতোপূর্বে আরেকটি মামলায় হাজতবাস করে চলতি মাসেই জামিনে মুক্তি পেয়ে সে আবারও টিকিট কালোবাজারির কাজে লিপ্ত হয়। গ্রেফতারকৃত রশিদের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির ০১ টি মামলা রয়েছে। ধৃত খোকন এর নামে ০৪ টি মামলা এবং লিটনের নামেও ০৪ টি করে টিকিট কালোবাজারির মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তারা প্রত্যেকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও একই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।