রাজধানীতে অজ্ঞানপার্টি এবং ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ২৭ সদস্য আটক
প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০২২
র্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর শাহজাহানপুর, মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ এবং কমলাপুর এলাকা হতে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি এবং ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ২৭ জন গ্রেফতার; অজ্ঞান ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত মলম ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী ও পথচারী ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে জখমপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন। এসব ভ‚ক্তভোগীদের বেশির ভাগই কোন আইন-শৃংখলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয় না। ফলে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের প্রায় সকলেই মাদকাসক্ত। সাম্প্রতিককালে ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়টি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। ফলশ্রæতিতে র্যাব উক্ত ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৩ এর আভিযানিক দল ২৭/১০/২০২২ তারিখ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর, মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ এবং কমলাপুর থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য ১। মোঃ রুবেল (১৯), পিতা-মৃত জামাল হোসেন, সাং-মালিগ্রাম, থানা-উজিরপুর, জেলা-বরিশাল, ২। মোঃ আরমান (২১), পিতা-মোঃ ছালাম মিয়া, সাং-নারায়নদী, থানা-মনোহরদী, জেলা-নরসিংদী, ৩। মোঃ তুহিন মোল্লা (৩৫), পিতা-মোঃ ইউনুস মোল্লা, সাং-ভিটাবেড়া, থানা-ভান্ডারিয়া, জেলা-পিরোজপুর, ৪। মোঃ শামীম শেখ (২৩), পিতা-শহিদ শেখ, সাং-পাটগাতী দক্ষিন পাড়া, থানা-টুঙ্গীপাড়া, জেলা-গোপালগঞ্জ, ৫। মোঃ শান্ত (১৯), পিতা-মোঃ মিন্টু, সাং-মোহনপুর, থানা-হরিরামপুর, জেলা-মানিকগঞ্জ, ৬। মোঃ বাবু মিয়া (৩২), পিতা-মোঃ আলম মিয়া, সাং-টুঙ্গীভরান, থানা-টুঙ্গী, জেলা-গাজীপুর, ৭। মোঃ সোহাগ (২৮), পিতা-মোঃ আজিজ, সাং-বাবুকান্দি, থানা-হোমনা, জেলা-কুমিল্লা, ৮। মোঃ আরশেদ (২৫), পিতা-মৃত হারুন, সাং-কেন্দুয়া কালিবাড়ী, থানা-জামালপুর সদর, জেলা-জামালপুর, ৯। মোঃ মিলন(২৫), পিতা-মৃত আবুল কালাম, সাং-কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় ভাসমান, থানা-ঢাকা রেলওয়ে, জেলা-ঢাকা, ১০। মোঃ সাকিব(২০), পিতা-মৃত হানিফ, সাং-কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় ভাসমান, থানা-ঢাকা রেলওয়ে, জেলা-ঢাকা, ১১। মোঃ সাগর(২২), পিতা-মোঃ হাকিম, সাং-কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় ভাসমান, থানা-রেলওয়ে, জেলা-ঢাকা, ১২। মোঃ বাবু হোসেন গাজী(২৬), পিতা-সোহরাব হোসেন গাজী, সাং-ঘোপ সেন্টার রোড, থানা- কোতায়ালী, জেলা-যশোর, ১৩। মোঃ আকাশ(২২), পিতা-মোঃ শাহদাত শেখ, সাং-দেলমথুরাপুর, থানা-মধুখালী, জেলা-ফরিদপুর, ১৪। মোঃ ইমরান(২২), পিতা-মৃত ওমর আলী, সাং-পিছকানতাল, থানা-নারায়নগঞ্জ বন্দর, জেলা-নারায়নগঞ্জ, ১৫। সাগর(২৮), পিতা-বাবুল বেপারী, সাং-শ্রীকৃষ্ণপুর, থানা-দোহার, জেলা-ঢাকা, ১৬। মোঃ শান্ত(২২), পিতা-মোঃ আলমগীর, সাং-রাজনাপাড়া, থানা-কলাপাড়া, জেলা-পটুয়াখালী, ১৭। মোঃ রিফাত উদ্দিন(২৩), পিতা-মাত আব্দুল বাসেত চৌধুরী, সাং-বড় হাজীপুর, থানা-বালাগঞ্জ, জেলা-সিলেট, ১৮। মোঃ সুজন(২২), পিতা-মুরাদ হোসেন, সাং-গুজাদিয়া, থানা-করিমগঞ্জ, জেলা-কিশোরগঞ্জ, ১৯। সুজন(২৩), পিতা-মোঃ সেলিম, সাং-শুকলাপুর, থানা-গেন্ডারিয়া, ডিএমপি,ঢাকা, ২০। মোঃ ওয়াসিম আকরাম(২২), পিতা-মোঃ ইদ্রিস, সাং-ষ্টেডিয়াম এলাকায় ভাসমান, থানা-পল্টন, ঢাকা, ২১। মোঃ ইব্রাহিম (২২), পিতা-মোঃ ইসহাক, সাং-ষ্টেডিয়াম এলাকায় ভাসমান, থানা-পল্টন, ঢাকা, ২২। মোঃ আরিফ হোসেন(২৭), পিতা-মোঃ অহিদুর রহমান, সাং-রায়পুর, থানা-মোহাম্মদপুর, জেলা-মাগুরা, ২৩। মোঃ সুমন(২২), পিতা-মোঃ ফারুক সরদার, সাং-ছিটকা, থানা-বাউফল, জেলা-পটুয়াখালী, ২৪। মোঃ কবির হোসেন (৩৫), পিতা-মোঃ আঃ মান্নান, সাং-হামছাদি, থানা-সোনারগা্ওঁ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ, ২৫। মোঃ কামরুল হাসান (৩৮), পিতা-মৃত জব্বার খান, সাং-মশুরা কান্দা, থানা-সোনারগাঁও, জেলা-নারায়ণগঞ্জ, ২৬। মোঃ রকি ব্যাপারী(৩২), পিতা-মৃত সাত্তার ব্যাপারী, সাং-দুর্গাপদ্দি, থানা-রাজৈর, জেলা-মাদারীপুর, ২৭। মোঃ সোহাগ (৩২), পিতা-মোঃ আবুল খায়ের, সাং-গোবিন্দপুর ১২ নং ওয়ার্ড, থানা-বরুড়া, জেলা-কুমিল্লাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকালে উক্ত আসামীদের নিকট হতে ০১ টি সুইচ গিয়ার, ০৮ টি চাকু, ০২ টি ক্ষুর, ০৯ টি বেøড, ০৩ টি এন্টিকাটার, ০৩ টি বিষাক্ত মলমের কৌটা, ০২ টি বিষাক্ত স্প্রে, ০৭ টি মোবাইলফোন, ০২ টি সীমকার্ড, ০৫ টি মানিব্যাগ, ০২ টি হাত ঘড়ি, ০১ টি হেডফোন এবং নগদ ৩৩১৩/-টাকা উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ, বিজিবিএম, পিবিজিএম, পিএসসি।
অধিনায়ক জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীরা রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারী সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। তারপর সহজ সরল যাত্রীদের টার্গেট করে কখনও তাদেরকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং বিষাক্ত চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। উক্ত বিষাক্ত পানীয় সেবন করার বা বিষাক্ত স্প্রের ঘ্রাণ নেওয়ার পর উক্ত যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তারা ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়। এসব ছিনতাইকারী সদস্যদের ভূক্তভোগীরা খুব কম ক্ষেত্রেই সনাক্ত করতে পারেন। ফলে এসব ছিনতাইকারী সদস্যরা নির্বিঘেœ তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
অধিনায়ক আরও জানান, সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন অলি গলিতে উৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা হতে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করেনা। এ সকল ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার ফলে পথচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে রাজধানীতে আগত যাত্রীরা যাতে নিরাপদে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পন্ন করে নির্বিঘেœ স্বস্তির সাথে বাড়ী ফিরে যেতে পারেন এলক্ষ্য নিয়ে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাবের সাড়াঁশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ধৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।