ভয়াল সিডরের স্মৃতি উপকূলবাসীকে আজও তাড়িয়ে বেড়ায়
প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০২২
আগামীকাল ১৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার। ভয়াল সিডর দিবস। ২০০৭ সালের এ দিনে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে বরগুনার উপকুলীয় এলাকা ভয়াবহ ধ্বংস যজ্ঞের শিকার হয়। স্থানীয় মানুষের স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে, সেদিন সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটা। তীব্র দমকা হাওয়ার সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আবহাওয়া বিভাগের ১০ নম্বর সতর্ক সংকেত শুনেও আশ্রয় কেন্দ্রে না গিয়ে বেশির ভাগ মানুষই রয়ে গেলেন বাড়িতে। তাদের ধারণা ছিল, কত ঝড়ই এলো গেলো, এবারেও তাদের কিছু হবে না। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিডর আঘাত হানলো উপকূলীয় এলাকায়। প্রবল ঝড় ও মাত্র ১০ মিনিটের জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের কয়েক হাজার মানুষকে ভাসিয়ে নিলো। সকালে সব লন্ডভন্ড। লাশের পর লাশ। চারদিকে শুধুই ধ্বংসলীলা।
জেলা ত্রাণ কার্যালয়ের সূত্র জানায়, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের এ ঘূর্ণিঝড়ে সিডরে জেলায় প্রাণ হারান ১ হাজার ৩৪৫ মানুষ। নিখোঁজ হন ১৫৬ জন। ৩০ হাজার ৪৯৯ টি গবাদি পশু ও ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ টি হাঁস-মুরগী মারা যায়। ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬১ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সম্পূর্ণ গৃহহীন হয়ে পড়ে ৭৭ হাজার ৭৫৪ টি পরিবার। ভয়াল সিডরের স্মৃতিতে এখনো শিউরে ওঠেন উপকূলের মানুষেরা। মহাবিপদ সংকেতের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। বরগুনা সদর উপজেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার হয় নলটোনা গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ের পরের দিনই সেখানে অর্ধ শতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। গ্রামটি পানির নিচে থাকায় লাশ দাফনের জন্যও কোন স্থান খুঁজে পাওয়া যায়নি। সিডর পরবর্তী সময়ে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে দেশ-বিদেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো।
ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন মাঝের চরের গর্ভবতী গৃহবধূ বিলকিস বেগম। ঝড় ও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সপ্তাহখানেক পর বিলকিস বেগমের কোল আলো করে একটি পুত্রসন্তন জন্ম নেয়। আত্মীয়-স্বজনরা শিশুটির নাম রাখেন সিডর। তার বয়স এখন ১৫ বছর চলছে। ঘূর্ণিঝড় সিডরের স্মৃতি নিয়েই শিশু সিডর বেড়ে উঠছে। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানায়, সিডর ও আইলায় বরগুনার ৪৮৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। তখন সরকার ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। যা দিয়ে ২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন গমের মাধ্যমে ১০.৬৫৮ কিলোমিটার বাঁধ (অস্থায়ী প্রতিরক্ষা) মেরামত করা হয়েছে।
বরগুনার উন্নয়ন কর্মী ও আমতলী প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন পান্না জানিয়েছেন, অস¤পূর্ণভাবে মেরামত করা এ বেড়িবাঁধ এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলার পুরাকাটা, ডালভাঙ্গা, আমতলীর জয়ালভাঙ্গা, ঘটখালী, পাথরঘাটার পদ্মা ও রুহিতায় বেড়িবাঁধই নেই। এসব এলাকার মানুষ দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে।