আগৈলঝাড়ায় ৬০ বছর ধরে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো বিলিয়ে আসছেন রমণী কান্ত
প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে: দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে প্রত্যন্ত গ্রামের কচিকাচা ছেলেমেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো বিলিয়ে আসছে রমণী কান্ত বেপারীর পাঠশালা। এজন্য তিনি কোন নির্ধারিত টাকাপয়সা নেন না। অভিভাবকদের আর্থিক অবস্থা বুঝে মাস শেষে যে যা দেয় তাই নিয়েই তিনি খুশি।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের রাখাল বেপারীর ছেলে রমণী কান্ত বেপারী ১৯৭১ সালের পূর্বে স্কুল ছাত্র থাকাবস্থায় এলাকার গরীব অসহায় পরিবারের সন্তানদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে প্রাইভোট পরানো শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে রমণী কান্ত বেপারী এসএসসি পাশ করে ইচ্ছে করলে ওই সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী পেতে পারতেন। কিন্তু ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মায়ায় পরে তিনি যাননি। তিনি রাংতা সার্বজনীন দুর্গা মন্দির আঙ্গিনায় শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান দিয়ে আসছেন।
দেখতে দেখতে প্রায় ৬০ বছর ধরে তিনি এ শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত রয়েছেন। মাস শেষে শিশু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা খুশি হয়ে কেউ ১শ’, কেউ দেড়শ’, কেউবা ২শ’ টাকা দিয়ে থাকেন, তাতেই শিক্ষক রমণী কান্ত বেপারী খুশি। সপ্তাহে শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সারে ১২টা পযন্ত শিশুদের লেখাপড়া করানো হয়। বর্তমানে এখানে ২৫-৩০ জন শিশু শিক্ষার্থী পাঠদানে করাচ্ছেন। তার কাছে পাঠদান নিয়ে এলাকার অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় পদে চাকুরী করে আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। দেখা গেছে একই ঘরে বাবা তার কাছে হাতেখড়ি নিয়েছেন, পরবর্তীতে ছেলে তার কাছে হাতেখড়ি নিয়েছেন, বর্তমানে তার কাছে নাতিও হাতেখড়ি নিচ্ছেন। ব্যক্তি জীবনে রমণী কান্ত বেপারীর স্ত্রী রুম্পাকে নিয়ে তার সংসার। বাড়িতে একটি দোচালা টিনের ঘরে তাদের বসবাস।
একমাত্র ছেলে তাপস বেপারী একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকুরী করেন। রমণী কান্ত বেপারীর কিছু কৃষি জমি রয়েছে। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা না পেলেও তার নামে রয়েছে বয়স্ক ভাতার কার্ড। রমণী কান্ত বেপারী বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকে এখানে বসে এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে আসছি। যতদিন বেঁচে আছি এ পেশায় যুক্ত থেকে মরতে চাই।
শিশু শিক্ষার্থীর অভিভাবক শিপ্রা রানী পাত্র বলেন, আমার মেয়েকে রমণী স্যারের কাছে পড়াতে নিয়ে এসেছি। স্যার খুবই ভাল পড়ান। আরেক অভিভাবক কমল মন্ডল বলেন, এই স্যারের কাছে আমার বাবা পড়েছে, আমি পড়েছি, এখন আমার ছেলেও পড়ছে।
রাংতা সার্বজনীন দূর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি রনজিত বৈদ্য বলেন স্বাধীনতার আগে থেকে রমণী কান্ত বেপারী এখানে বসে এলাকার শিশুদের প্রাইভেট পড়িয়ে আসছেন। তার কারণে এলাকার অসহায় দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে।