ঢাকা বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে পেঁয়াজ বেচতে না পেরে ভারতের ক্ষতি ১১ শ’ কোটি রুপি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:২১ দুপুর

দেশের কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর জেরে চরম বিপাকে পড়েছেন ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানিকারকরা। সীমান্তে আটকে থাকা হাজার হাজার টন পেঁয়াজ পচতে শুরু করেছে। ফলে পানির দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন দেশটির কৃষকরা। 

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার মহদীপুর–সোনামসজিদ সীমান্তে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ মাত্র ২ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। রপ্তানিকারকদের দাবি, বাংলাদেশ হঠাৎ পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, বাংলাদেশি আমদানিকারকদের মৌখিক আশ্বাসের ভিত্তিতে তারা সীমান্তে রপ্তানির জন্য পেঁয়াজ মজুদ করেছিলেন। ঘোজাডাঙ্গা, পেট্রাপোল, মহদীপুর ও হিলি সীমান্তে অন্তত ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ মজুদ করা হয়েছিল, যার বাজারমূল্য কয়েক কোটি রুপি।

তবে রপ্তানি না হওয়ায় এসব পেঁয়াজ পচতে শুরু করেছে। ফলে ক্ষতি কমাতে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক দিয়ে ভালো পেঁয়াজ থেকে পচা পেঁয়াজ আলাদা করছেন।

সাধারণত মহদীপুর সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ৩০–৩৫ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢোকে। সেই হিসেবে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা শুধু এই সীমান্ত এলাকাতেই প্রায় ২০ হাজার টন পেঁয়াজ মজুদ করেছিলেন। কেজিপ্রতি ২২ রুপিতে কেনা সেসব পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ রুপিতে। এমনকি এমন দামেও কেউ পেঁয়াজ কিনছে না। ফলে পচা পেঁয়াজ ফেলতে হচ্ছে সড়কে।

১৬ নভেম্বর এক নোটিশে বাংলাদেশ জানিয়েছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানির অনুমতি সীমিত করেছে। এ বিষয়ে এক ভারতীয় ব্যবসায়ী বলেন, ‘তারা কেউ ৫০ ট্রাক, কেউ ৭০ ট্রাক পেঁয়াজ মহারাষ্ট্রের নাসিক এবং ইন্দোর থেকে কিনে বড় লরিতে করে মালদহের গুদামে এনেছে। তবে বর্তমানে সেগুলো বিক্রি করতে না পেরে সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ শ’ কোটি রুপি।’

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর ডেল এইচ খান বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করা সরকারের ভালো সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথ আরও সুদৃঢ় হবে।

 

এদিকে, বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতের ভেতর দিয়ে ভুটানকে ট্রানশিপমেন্টের পণ্য নেওয়ার অনুমোদন দেয়নি ভারত। ফলে থাইল্যান্ড থেকে জাহাজে করে ভুটানের আনা পরীক্ষামূলক ট্রানশিপমেন্টের পণ্যের চালান লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে আটকে আছে।

অথচ বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সেভেন সিস্টার্সে পণ্য আনা–নেয়া করছে ভারত। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে এসব ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। শুধু সড়ক নয়, বাংলাদেশের নৌবন্দর এবং রেলপথও দেদারসে ব্যবহার করে নিজেদের বাণিজ্য চালিয়েছে ভারত। নামমাত্র টোল ফি দিয়ে এ দেশের সড়ক, নৌ এবং রেলপথ ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকা। এরপরও ফ্যাসিস্ট হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে বলেছেন, তিনি ভারতকে যা দিয়েছেন, তা সারা জীবন মনে রাখবে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে—হাসিনা ক্ষমতায় না থাকায় ভারত কি সব ভুলে গেল? অর্থাৎ হাসিনাকে ক্ষমতায় না রাখতে পেরে কৌশলে বন্ধ করছে করিডর। এমনকি হরহামেশাই দিচ্ছে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও চলছে তুমুল সমালোচনা।

বিষয়টির কঠোর সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ডেল এইচ খান। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ১টা মাত্র কন্টেইনার ভুটানে পাঠাতে চেয়েছিল। ভারত না করে দিয়েছে। অথচ হাসিনা ভারতকে যা দিয়েছিল, তা নাকি তারা ভুলতে পারবে না জীবনেও! ৬ বছর দিল্লি থেকে হাসিনা আর-এর যে ট্রেনিং পেয়েছিল, তা দিয়ে পাক্কা ২২ বছর রাজ করেছে। ট্রানজিট, ট্রানশিপমেন্ট আর করিডোরের নামে রেলপথ, সড়কপথ, নৌপথ, আকাশপথ সব খুলে দেওয়া হয়েছিল যেন মেইনল্যান্ড ইন্ডিয়া থেকে সাই সাই করে দাদারা সিস্টারে আসা–যাওয়া করতে পারে।’

এই বিষয়ে মেজর ডেল এইচ খান বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী কোনো দেশের সমুদ্রবন্দর না থাকলে সে দেশের পার্শ্ববর্তী দেশের বন্দর ব্যবহার করার অধিকার থাকে। অথচ ভারত এই নিয়ম উপেক্ষা করার মাধ্যমে মূলত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।এ ক্ষেত্রে আগামী প্রজন্মকে ভারতবিরোধী হতেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

Link copied!