ঘূর্ণিঝড় আম্পান: পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত : ২১ মে ২০২০

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অন্যতম সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবনসহ দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে, কলকাতায়ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত পাওয়া খবরে ১২ জন নিহত হওয়ার কথা জানা গেছে বলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন। আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পাওয়া না গেলেও শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ে চাপে থাকা পশ্চিমবঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আরও গভীর সঙ্কটে পড়ল। ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা ও দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে রাজ্য প্রশাসনকে। আম্পান করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব থেকেও বেশি ক্ষতি করেছে এবং মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, জানিয়েছে এনডিটিভি।

বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি সাগর থেকে স্থলে উঠে আসতে শুরু করে। সন্ধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ে আম্পান। এ সময় বাতাসের একটানা বেগে ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার থাকলেও দমকা ও ঝড়ো হওয়া কখনো কখনো ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে যায়। কলকাতার দমদম এলাকার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যায়।

“এলাকার পর এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে,” বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা থেকে পাঁচ লাখেরও বেশি লোককে আগেই নিরাপদ স্থান সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। উড়ষ্যায় সরানো হয় এক লাখ লোককে। এতে বহু মৃত্যু এড়ানো গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অব্যাহত বৃষ্টি ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছানো যায়নি বলে মমতা জানিয়েছেন।

ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাত পর্যন্ত কলকাতায় ২৪৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে মে মাসে একদিনে কলকাতায় এতো বৃষ্টি আর হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়টি কলকাতায় তাণ্ডব চালানোর পর উত্তরপূর্বে নদীয়া ও মুর্শিদাবাদের দিকে এগিয়ে গেছে বলে সঞ্জীব জানিয়েছেন। কলকাতা শহরে প্রায় তিন শতাধিক গাছ ভেঙে পড়েছে ও বহু এলাকা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে বলে সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে।

সুন্দরবনে ভারতীয় বন দপ্তরের বিভিন্ন ক্যাম্প জলোচ্ছ্বাসের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। জেটি ভেঙে যাওয়ায় সাগরদ্বীপ মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, ভাঙড় ও বসিরহাটসহ বহু এলাকায় প্রচুর ঘরবাড়ি, ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট জেলায় প্রায় ১০ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন :