আগুন না নিভিয়ে তারা ভিডিও করতেই ব্যস্ত ছিলেন!

প্রকাশিত : ২৮ মে ২০২০

ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) বিস্ফোরণে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।বুধবার (২৭ মে) রাত ১০টার দিকে এসি বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে।এদিকে, হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড শুরু হলে আগুন না নিভিয়ে ভিডিও করতে ব্যস্ত ছিল উৎসুক জনতা। আর এই ধরনের খামখেয়ালিতে প্রাণ গেল পাঁচজনের। সাধারণ মানুষের এমন ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ আচরণে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

অগ্নিকাণ্ডে নিহতরা হলেন মো. মাহবুব (৫০), মো. মনির হোসেন (৭৫), ভারনন এ্যান্থনী পল (৭৪), খাদেজা বেগম (৭০) এবং রিয়াজ উল আলম (৪৫)। এখন পর্যন্ত মৃত ব্যক্তিদের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ শাহানুর রহমান জানান, মাহবুব ১৫ মে, মনির হোসেন ১৬ মে, অ্যান্থনি পল ও খোদেজা বেগম ২৫ মে, রিয়াজুল আলম ২৭ মে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, আগুনের খবর পেয়ে তাদের তিনটি ইউনিট হাসপাতালে যায়। মূল ভবনের বাইরে আলাদা জরুরি বিভাগে আগুন লাগে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার জানান, আজ রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালে আগুনের সূত্রপাত হয়। হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে রাত ১০টা ২৫ মিনিটে। হাসপাতালের ভেতর থেকে পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। নিহতদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও একজন নারী। আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ওই রোগীরা। হাসপাতালের নিচ তলার এসি বিস্ফোরণে এই আগুন লাগে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার কামরুল আহসান জানান, প্রচণ্ড ধোঁয়ায় ওই পাঁচ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিসের হাতে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, তাদের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগে থেকেই সেখানে উৎসুক জনতার ভিড় লেগেছিল। তবে সেই জনতা আগুন নেভাতে এগিয়ে না এসে বরং ভিডিও ধারণ করাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাই হতবাক হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই বলেন, এসব মানুষের কাণ্ডজ্ঞান দেখে অনেকটাই অবাক হতে হয়। চোখের সামনে আগুন জ্বলছে, সেটা নেভাতে এগিয়ে না গিয়ে ভিডিও ধারণ করতেই ব্যস্ত সবাই। এমনকি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তিনটি ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও কেউ তাদের সাহায্য করতে যায়নি।

এর আগেও ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার ঘটনায় উৎসুক জনতার এমন ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ আচরণ দেখা যায়। আগুন নেভাতে এগিয়ে না এসে ভিডিও ধারণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। অথচ বিপদে এগিয়ে আসাই মানুষের ধর্ম, এবং সে রেওয়াজই মেনে আসছিলেন এ দেশের মানুষ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারি না, যেখানে এভাবে আগুন জ্বলছে, সেখানে সাধারণ উৎসুক জনতা সাহায্যে এগিয়ে আসা বাদ দিয়ে ভিডিও ধারণেই ব্যস্ত হয়ে যায়। এসব ভিডিও দিয়ে তারা কী করবে, এমনই প্রশ্ন জাগে মনে। অনেকে তো এমন অতি উৎসাহী যে ভিডিও ধারণ করার জন্য একেবারে আগুনের কাছাকাছি চলে আসে, এতে করে আমাদের কাজেও বাধা সৃষ্টি হয়।

গুলশান থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের বাইরের দিকে করোনা রোগীদের জন্য যে তাঁবু টানিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেখানে আগুন লাগে।

https://www.facebook.com/mkshopon/videos/10220624413232922/?t=3

আপনার মতামত লিখুন :