সাহারা খাতুনের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন

প্রকাশিত : ১০ জুলাই ২০২০

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ তিনি ঢাকার কুর্মিটোলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল আজিজ ও মাতার নাম টুরজান নেসা। শিক্ষাজীবনে তিনি বিএ এবং এলএলবি ডিগ্রি আর্জন করেন এবং রাজনীতির পাশাপাশি আইনপেশায় নিযুক্ত ছিলেন।

ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে নাম লেখান সাহারা খাতুন। ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা যখন গঠিত হয়। ঢাকায় মহিলাদের সংগঠিত করতে শুরু করেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমান। তখন তিনি সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালে ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দিনও তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখনকার ছাত্রলীগ নেত্রী। তার সাথে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সাহারা খাতুনকে।

তিনি প্রথমে নগর আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে মহিলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদিকা এবং নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-আইন সম্পাদিকা, পরে আইন সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। তখন তিনি নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ এবং মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ আর গ্রহণ করেননি।

পরবর্তী কাউন্সিলে সাহারা খাতুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, আইয়ুব-ইয়াহিয়া বিরোধী আন্দোলন, দেশ স্বাধীনের আন্দোলন, ৭৫’র পর স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময় নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন রাজপথে। আন্দোলন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে হরতাল, সভা-সমাবেশ করতে গিয়ে গ্রেফতার এবং নির্যাতিত হয়েছেন।

আইন পেশায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের বহু সংখ্যক নেতাকর্মীর মামলা বিনাপয়সায় লড়েছেন তিনি। যারা আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন তাদের ভরসা ছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।

বাংলাদেশ সরকারের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। এর আগে ফখরুদ্দিন, মঈনুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার করা হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তার সঙ্গে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনও গ্রেফতার হন।

২০০৯ সালের অওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। এর আগে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন সদ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ শুরু হলে তিনি দ্বন্দ্ব সমাধানে নেতৃত্ব দেন। বিদ্রোহ দমনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। পিলখানায় সরাসরি গিয়ে সেখানে বিদ্রোহীদের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নেয়ার পরিবেশ তৈরি করেন।

উল্লেখ্য, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১২টা ২৬ মিনিটে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত সোমবার তাকে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জ্বর, অ্যালার্জিসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে অসুস্থ অবস্থায় গত ২ জুন সাহারা খাতুন ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন।

অবস্থার অবনতি হলে গত ১৯ জুন সকালে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর অবস্থার উন্নতি হলে তাকে গত ২২ জুন দুপুরে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরে ২৬ জুন সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবারও তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।

আপনার মতামত লিখুন :