করোনা পরীক্ষা জালিয়াতির মামলায়: চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা

প্রকাশিত : ১২ জুলাই ২০২০

করোনা পরীক্ষা জালিয়াতির মামলায় গ্রেফতার ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। অধিকতর তথ্য জানতে সাবরিনার চার দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। এর আগে রোববার (১২ জুলাই) ডা. সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের তেজগাঁও ডিসি কার্যালয়ে ডাকা হয়। পরে সেখানে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের কোন সঠিক উত্তর দিতে না পারায় করোনা পরীক্ষা জালিয়াতির মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।করোনা পরীক্ষা জালিয়াতির মামলায়: চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা

এর পরেই বিষয়টি নিয়ে সংবাদ ব্রিফিং করেন তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ। তিনি জানান, প্রথমে জেকেজির চেয়ারম্যান পদে থাকার কথা অস্বীকার করেন সাবরিনা। পরে আরোও অনেক প্রশ্ন করলে সবগুলোর উত্তর দিতে ব্যর্থ হন তিনি। পরে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। তাৎক্ষণিক সেখানে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ডিসি হারুন অর রশিদ জানান, জেকেজিতে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক আরিফ চৌধুরীসহ ৬ জনকে গ্রেফতার সময়ে এর সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জানতে পারি যে, ডাক্তার সাবরিনাও এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। পরে তদন্তের নামে পুলিশ। টানা কয়েকদিনের তদন্তের শেষে সাবরিনাকে ডিসি কার্যালয়ে ডাকা হয়। সেখানে কথা গরমিল পাওয়া যায়।

তিনি আরো জানান, রিমান্ডে নিয়ে ডা. সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, যে এর সঙ্গে আরো কেউ জড়িত আছে কি না। যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ জানিয়েছে, জেকেজি হেলথকেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনা টেস্টের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনা আইইডিসিআরের মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপে তৈরি করা হয়। জব্দ করা ল্যাপটপে এর প্রমাণ মিলেছে। জেকেজির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়া মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতো। প্রতি রিপোর্টে পরীক্ষার কথা বলে ৫-১০ হাজার টাকা নিতো। আর বিদেশিদের কাছ থেকে নিতো ৮০ থেকে ১০০ ডলার। সেই হিসাবে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্টে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।

এদিকে, করোনার ভুয়া রিপোর্ট ঘটনায় গত ২৩ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের নার্স তানজিনা পাটোয়ারী ও তার স্বামী হুমায়ূন কবিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা জানায়, জেকেজি হেলথ কেয়ারে তানজিনার বেতন ছিল ৩০ হাজার টাকা। ভুয়া করোনা পরীক্ষা করে কোটি কোটি টাকা কামানো দেখে তানজিনা প্রতিষ্ঠানটির কাছে আরও বেশি বেতন দাবি করে। বিষয়টি জেকেজির কর্ণধার আরিফ চৌধুরী জেনে তানজিনা ও তার স্বামীকে চাকরিচ্যুত করে। পরে তারা দুজন বাসায় বসে নিজেরাই করোনার ভুয়া টেস্ট করে মানুষকে রিপোর্ট দেওয়া শুরু করে। তানজিনা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতো, আর ঘরে বসে তার স্বামী রিপোর্ট তৈরি করতো।

এর পরেই গত ২৩ জুন রাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তানজিনা ও তার স্বামী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সব বলে দেয়। এরপর ২৪ জুন জেকেজির গুলশান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতারক আরিফসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা যায়, জেকেজির কর্ণধার স্বামী-স্ত্রী মিলে করোনা টেস্টের ভুয়া সনদ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি টেস্টের জন্য জনপ্রতি নিয়েছেন সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি তারা নিতেন ১০০ ডলার।  এর আগে প্রতারণায় ঘটনা নিজেকে বাঁচাতে গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। স্বামী আরিফের কুর্কীতির অন্যতম সহযোগী ছিলেন সাবরিনা, এমনটাই মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে, জেকেজি হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী (সিইও) আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন জেকেজির অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা। তিনি বলেছেন, জেকেজির সিইও আরিফ চৌধুরী এ মুহূর্তে আমার স্বামী না। আমরা আলাদা থাকছি। ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছি। আরও দুই মাস বাকি আছে (ডিভোর্স কার্যকর হতে)। এর আগে, জেকেজি হাসপাতালে করোনার ভুয়া রিপোর্ট তৈরির বিষয়ে মুহূর্তেই নিজের বক্তব্য অস্বীকার করছেন প্রতিষ্ঠানটির অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও অস্বীকার করেছেন সাবরিনা।

সময় সংবাদের পক্ষ থেকে ডা. সাবরিনার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। সাক্ষাৎকারে দেয়া বক্তব্য মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই অস্বীকার করেন তিনি। সাবরিনা প্রথমে বলেন, জেকেজি হাসপাতালের এ অনিয়মের বিষয়ে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও এডিজিকে জানিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি তাদের জানিয়ে নিজেকে জেকেজি থেকে সরিয়ে নেন বলে দাবি করেন সাবরিনা।এছাড়া রাজধানীর মহাখালীর তিতুমীর কলেজে নমুনা সংগ্রহের বুথ বসিয়ে সেখানে প্রশিক্ষণের নামে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও পাওয়া যায়। কলেজের কক্ষে নারী-পুরুষের আপত্তিকর অবস্থানসহ নানা অনৈতিক কাজে বাধা দিলে তিতুমীর কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রদের ওপরও হামলা করে আরিফুলের লোকজন।

 

আপনার মতামত লিখুন :