কারেন্ট সুদে জড়িয়ে মানুষ ফতুর,যাচ্ছে প্রাণ! পালাচ্ছে মানুষ’

প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০২০

বাগেরহাট প্রতিনিধি :বাগেরহাটের ৯ উপজেলায় কারেন্ট সুদে জড়িয়ে মানুষ ফতুর, যাচ্ছে প্রাণ! পালাচ্ছে মানুষ। সুদখোরদের নির্মম নির্যাতনে মানুষ এখন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। এটা এখন এ উপজেলার সাধারন ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। অত্যাচারের স্টীমরোলারে পিষ্ট সাধারণ মানুষ এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব। অবস্থাটা এমন, যেন সব কিছুই সুদে কারবারিদের হাতে জিম্মি। সুবিচার না পাওয়া অসহায় মানুষ গুলো এখন আর বিচার চায় না। বৃহস্পতিবার বিকেলে বড় আক্ষেপের সাথে এমনটাই জানালেন সুদের দায়ে সব হারানো সুব্রত সরকার (৪০)।

উপজেলার সাবোখালী গ্রামের ভরত সরকারের ছেলে কৃষক সুব্রত সরকার জানান, জীবিকার তাগিদে তিনি আড়–য়াবর্নী ডরপাড়া গ্রামের শহীদ শেখসহ বেশ কয়েক জনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা সুদে নেন। এক বছরে ওই টাকার ৩-৪ গুন টাকা দিলেও এখনও তাদের টাকা পরিশোধ হয়নি। বর্তমানে সুদে কারবারিরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অবর্ননীয় অত্যাচার নির্যাতন করছে। তাই তিনি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। উপজেলার কালশিরা গ্রামের কলেজ ছাত্র রাজীব মালাকার জানান, তার কাকা অজয় মালাকার সবুর শেখের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা সুদে নেন। সেই বাবদ জমি বিক্রি করে সবুরকে ৮ লাখ টাকা দেয়ার পরও সে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করে। তখন তার কাকা অজয় পালিয়ে গেলে রাজীবের বাবা ভাস্কার্য শিল্পী রাম প্রসাদ মালাকারকে অত্যাচার শুরু করে। সেই অত্যাচার সইতে না পেরে রাম প্রসাদ মালাকার গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

রাজিব আরও জানান, এর আগে সুদেকারবারি হানিফ শিকদারের অত্যাচারে রুইয়ারকুল গ্রামের সনজিত ব্রক্ষ্ম গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এরও আগে দেনার দায়ে সুরশাইল গ্রামের মাওলানা হারুন গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। সর্বশেষ এখানে গত ২০ জুলাই সুদখোরদের নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন সইতে না পেরে স্কুল শিক্ষিকা হাসিকনা বিশ্বাস (৩৮) আত্মহত্যা করেছেন। এর আগে সুদখোরদের দেনা থেকে রেহাই পেতে উপজেলার গরীবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রশান্ত কুমার পান্ডে আত্মাহুতির চেষ্টা চালান।

এছাড়া সুদে কারবারিদের অত্যাচারের স্টীমরোলারের চাপ সইতে না পেরে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি ফেলে পালিয়েছে কুরমনি গ্রামের শিব শংকর বিশ্বাস, দিপঙ্কর বিশ্বাস, শংকর মজুমদার, সুবাস বসু, চিতলমারী বাজারের ব্যবসায়ী ফোরকান আলী, খড়মখালী প্রকাশ বালা, হরিবর মন্ডল, নীতিশ মন্ডল, সাবোখালী গ্রামের পরিতোষ মজুমদার, বৈষ্ণব বিশ্বাস, কালশিরার অজয় মালাকার, কৃষ্ণ মালাকার, বিন্দু ব্রক্ষ্ম, বাবু ব্রক্ষ্ম, কালিপদ মজুমদার কালা, হরষিত বিশ্বাস, বেন্নাবাড়ি গ্রামের মনোজ বিশ্বাস ও বিমল বিশ্বাসসহ শতাধিক মানুষ। তাছাড়া বহু মানুষের ভিটেমাটি জোর পূর্বক লিখে নিয়েছে সুদখোররা। এ ব্যাপারে শহীদ শেখ, হানিফ শিকদার ও সবুর শেখ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম জানান, স্কুল শিক্ষিকার দূর্ঘটনাটি অত্যান্ত দুঃখজনক। বিষয়টি আইন-শৃংখলা বাহীনি তদন্ত করছে। এছাড়া সরকারী অনুমোদন ছাড়া কেউ অবৈধ ভাবে অর্থলগ্নী ব্যবসা করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রীয়া চলছে বলে তিনি উল্লেখ করে।

আপনার মতামত লিখুন :