নিহত আ’লীগ নেতা আনছার আলী দিহিদারের স্ত্রী ২২ মাস পরে যন্ত্রণা ভোগ করে মারা গেলেন

প্রকাশিত : ১ আগস্ট ২০২০

বাগেরহাট প্রতিনিধি : আব্বু গেছে, আম্মুও চলে গেল। আব্বুর খুনিদের ফাসি আম্মু দেখতে পারল না। আমাদের কেউ থাকল না। আমরা কার কাছে যাব। খুনি শহিদুল ফকিরসহ সকলের ফাসি চাই। মায়ের মরদেহের দাফন শেষে শুক্রবার (৩১ জুলাই) দুপুরে এসব কথা বলে বিলাপ করছিলেন ২০১৮ সালের ১লা অক্টোবর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত আনছার আলী দিহিদারের ছেলে মেহেদী হাসান শাওন। শাওন ও তার বোন সাবরিনা আফরিন সুমিও তাদের বাবা-মায়ের হত্যাকারীর বিচার দেখে যেতে পারবেন কিনা এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দাফনে আসা অনেকে।

২০১৮ সালের ১লা অক্টোবর দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী দিহিদার ও উপজেলা যুব লীগের সহ-সভাপতি শেখ শুকুরকে ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ফকির শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন নির্মমভাবে হত্যা করে। এসময় আনছার আলী দিহিদারের স্ত্রী মোসা মঞ্জু বেগম এবং শ্রমিক নেতা বাবলু শেখকে বেধরক মারপিট করে সন্ত্রাসীরা। মারপিটে মঞ্জু বেগমের দুই পা ও বুকের হাড় ভেঙ্গে যায়। পঙ্গুত্ব বরণ করেন মঞ্জু। ২২ মাস বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ব বিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টার দিকে মারা যায়। বাবলুও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

এদিকে আনছার আলী দিহিদারের পরে তার স্ত্রীও মৃত্যুবরণ করায় আত্মীয় ও স্থানীয়দের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খুনিদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্ছার হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। নিহত যুবলীগ নেতা শুকুরের বড় ভাই দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও হত্যা মামলার বাদী শেখ ফারুক আহমেদ বলেন, সহকর্মী আনছার ও ভাইকে হারিয়েছি। আজ আনছার ভাইয়ের স্ত্রীও চলে গেলেন। কিন্তু খুনিদের কিছু হল না। অনেক আসামীই জামিনে বের হয়ে আমাদের হুমকী ধামকী দিচ্ছে। মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।

নিহত আনছার আলী দিহিদার ও নিহত মোসা মঞ্জু বেগমের মেয়ে সাবরিনা আফরিন সুমি বলেন, আব্বুকে যখন হত্যা করে সন্ত্রাসীরা তখন আম্মুকেও হত্যার চেষ্টা করে। সন্ত্রাসীদের মারপিটে আম্মুর পা ও বুকের হাড় ভেঙ্গে যায়। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে আম্মু বেচে যায়। কিন্তু পঙ্গুত্ব বরণ করে চিকিৎসা নিতে থাকতে হয়। আব্বুর খুনিদের ফাসি দেখার আসায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েছেন দীর্ঘদিন। কিন্তু আজ মাও চলে গেল। ওদের মারধরের পরে মা আর সুস্থ্য হননি। ওদের মার খেয়েই আমার মা মারা গেছে। আমি আমার পিতা-মাতার হত্যাকারীদের বিচার চাই।

দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ কিসলুর রহমান খোকন বলেন, আমরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই মামলার আসামীদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। স্থানীয় আরিফ মলি¬ক, আসলাম আলী দিহিদারসহ কয়েকজন বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামী লীগের দুইজন ত্যাগী নেতা আনছার ও শুকুরকে শহিদুল ফকিরের নেতৃত্বে হত্যা করা হল। হত্যাকারীদের মারধরে আহত আনছারের স্ত্রী মঞ্জু বেগমও ২২মাস পরে মারা গেল। এখনও কিছু আসামী বাইরে ঘুরে বেড়ায়। আমরা আসামীদের বিচার চাই।

২০১৮ সালের ১লা অক্টোবর দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী দিহিদার ও উপজেলা যুব লীগের সহ-সভাপতি শেখ শুকুরকে ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ফকির শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন নির্মমভাবে হত্যা করে। ৪ অক্টোবর রাতে মোরেলগঞ্জ থানায় নিহত শেখ শুকরের ভাই শেখ ফারুক হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ৪ জুন পুলিশ ৫৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। এর মধ্যে প্রধান আসামী ২ অক্টোবর দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির শহিদুল ইসলামসহ অনেকেই জেল হাজতে রয়েছেন।

 

আপনার মতামত লিখুন :