যশোরের হাটে চামড়ার দামে হতাশ ক্রেতা-বিক্রেতা

প্রকাশিত : ৪ আগস্ট ২০২০

বর্ষার কারণে জমেনি যশোরের কোরবানির ঈদ পরবর্তী প্রথম চামড়ার হাট। ট্যানারি প্রতিনিধি ও বাইরের ব্যাপারীদের সমাগম এবং চামড়ার আমদানিও ছিল কম। এ অবস্থায় চামড়ার ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। সংশ্লিষ্টদের দাবি সরকার নির্ধারিত মূল্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না ক্রয়-বিক্রয়ে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহৎ চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে কোরবানির ঈদ পরবর্তী প্রথম হাট ছিল আজ মঙ্গলবার (৪ আগস্ট)। এ হাটে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হয়। কিন্তু ভোর থেকে বিরামহীন বৃষ্টির কারণে হাটে চামড়া নিয়ে আসতে পারেননি ক্ষুদ্র ব্যাপারীরা। খুলনা ও যশোরের কিছু ব্যাপারী যৎসামান্য চামড়া নিয়ে আসলেও তা কেনার জন্য হাটে ছিল না ট্যানারি প্রতিনিধি ও বাইরের ব্যাপারীরা। ফলে হাটে আসা চামড়াগুলোও কাঙ্ক্ষিত মূল্যে বিক্রি করতে পারেননি তারা। ব্যাপারীদের দাবি বিক্রয় মূল্য দিয়ে চামড়া ক্রয় ও সংরক্ষণের খরচও উঠছে না।

শাহ আলম নামে এক ক্ষুদ্র ব্যাপারী বলেন, ৪০টি ছাগলের চামড়া কিনেছি প্রতি পিস ২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। এরপর চামড়া সংরক্ষণ করতে লবণ দিতে হয়েছে। হাটে আনতেও খরচ হয়েছে। কিন্তু আজ হাটে ক্রেতা নেই। ছাগলের চামড়া দাম ১০/১৫ টাকা করে বলছে। এতে বিক্রি করে লবণের দামও উঠবে না। এখন অবস্থা এমন যে হয় লসে বিক্রি করে যেতে হবে নয় ভৈরবে (নদীতে) ফেলে যেতে হবে।

আব্দুস সালাম নামে অপর এক ক্ষুদ্র ব্যাপারী বলেন, আমি ৪৫ পিস ছাগলের চামড়া এবং এক পিস গরুর চামড়া কিনেছি। ছাগলের চামড়া কেনা পড়েছে ৫০ টাকা করে আর গরুর চামড়া সাড়ে ৪শ’ টাকা। গরু চামড়াটা সাড়ে ৪শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছাগলের চামড়া দাম ৩০ টাকার উপরে কেউ বলছে না। এ অবস্থায় চামড়া বিক্রি বা ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাই করা হোক পুরোটাই লস যাবে। খুলনা থেকে চামড়া নিয়ে হাটে এসেছিলেন খুলনার নিতাই দাস।

তিনি বলেন, ৩৭ পিস চামড়া কিনেছি। প্রতিপিস চামড়া লবণ খরচ দিয়ে সাড়ে ৫শ’ টাকার উপরে দাম পড়েছে। হাটে বড় বড় ব্যাপারী না আসায় স্থানীয় ব্যাপারীরা চামড়া দাম কম বলেছে। যে দাম বলছে তাতে প্রতি চামড়ায় একশ’ টাকা করে লোকসান হবে। তিনি বলেন, ধার করে চামড়া কিনেছি। এখন লোকসানে বিক্রি করলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। চামড়া ফিরিয়ে নিয়ে গেলে খরচ আরও বাড়বে ফলে কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। যশোরের বাঘারপাড়া থেকে নিখিল দাস ১১০ পিস চামড়া নিয়ে হাটে আসেন।

তিনি বলেন, চামড়ার ঠিক দাম বলছে না ক্রেতারা। কেনা দামের থেকে এক থেকে দুইশ’ টাকা কম দাম বলছে। গাই (গাভী গরুর) ও ছাগলের চামড়ার দাম কেউ বলতেও চাচ্ছে না। হাটের অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি বলেন, একে বাইরের ব্যাপারীরা আসেনি। তারপর সকাল থেকে বৃষ্টি। এর খেসারত দিতে হবে আমার মত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। এদিকে, ক্রেতাদের দাবি ট্যানারি থেকে বকেয়া না পাওয়ায় এবং সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রয় নিয়ে সংশয় থাকায় তারাও দাম দিয়ে চামড়া কিনতে সাহস পাচ্ছেন না।

মোস্তাক আহমেদ নামে একজন ক্রেতা বলেন, চামড়ার আমদানি নেই। ব্যাপারীরা চামড়ার দাম বেশি চাচ্ছে। বকেয়া টাকা না পাওয়ায় আর্থিক সংকট রয়েছে। যে কারণে চামড়া কিনতে পারছি না। তাছাড়া বেশি দাম দিয়ে যে চামড়া কিনবো তা বিক্রি করবো কোথায়। কারণ ট্যানারি মালিকরাও সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কিনতে চায় না। তারাও সুযোগ নেবার চেষ্টা করে।

সাহেব আলী নামে একজন ক্রেতা বলেন, বাইরের ব্যাপারী না আসায় চামড়ার দাম একটু কম। একশ’ পিস চামড়া কিনেছি ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা দরে। আরও কিছু চামড়া কিনবো যদি এই দামে পাই। মুরাদ হোসেন নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, আজকের হাটে ভালো মানের চামড়া নেই। যে কারণে চামড়া কিনতে পারছি না। চামড়া কিনতে হলে আগামী শনিবারের হাটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, বর্ষার কারণে হাট জমেনি। তবে আগামী শনিবারের হাট জমবে এবং ব্যবসায়ী আশানুরূপ দামে চামড়া ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। তাছাড়া সীমান্তে রেড এলার্ট জারি থাকায় এ বছর চামড়া পাচারের কোন আশংকা নেই বলে জানান তিনি।

এদিকে জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেনের দাবি, বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে সরকার নির্ধারিত মূল্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি বলেন, সকাল থেকে হাটে আছেন। ছাগল ও গরুর চামড়া যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা।

তিনি আরও বলেন, সরকার চামড়া ক্রয়ের জন্য কোটি কোটি ঋণ দিলেও তা মাঠ পর্যায়ে এসে পৌঁছচ্ছে না। তাছাড়া বড় বড় ব্যাপারীরা নিজেরা লাভবান হতে চামড়া না কিনে বসে থাকছেন। যখন বিক্রেতারা হতাশ হয়ে পড়ছেন তখন কম দামে কিনছেন। যা চরম অনৈতিক কাজ। এছাড়া চামড়ার পাচার রোধে পুলিশ ও বিজিবির সহায়তায় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

আপনার মতামত লিখুন :