লেডি বাইকার ফারহানা ড্রিমি নববধূ নন, রয়েছে দেড় মাসের পুত্র সন্তান

প্রকাশিত : ২৭ আগস্ট ২০২০

বাকী বিল্লাহ, (সাঁথিয়া-বেড়া) পাবনা:  নিজের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের বাইক র‌্যালি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া যশোরের মেয়ে ফারহানা আফরোজ। বিয়ের তিন বছর পর গায়ে হলুদের দিনে বাইক চালিয়ে যশোর শহরে শোডাউন করে নেট জগতে হইচই ফেলে দিয়েছেন ফারহানা আফরোজ ড্রিমি। ওই দিন শহর জুড়ে বন্ধুবান্ধব ও সাথীদের নিয়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করার ১১ দিন পর ব্যতিক্রমী এ আয়োজনটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।তবে সম্প্রতি জানা গেছে, তিনি নববধূ নন।

তিনবছর আগে পাবনার বেড়া উপজেলার জাতসাকিনী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে আব্দুর রশিদের ২য় ছেলে হাসনাইন রাফির সাথে তার বিয়ে হয়। বর্তমানে তিনি গাজিপুরে কর্মরত। দেড় মাস আগে তার কোলজুড়ে এসেছে এক পুত্র সন্তান। নাম রেখেছেন তাজউদ্দিন। আব্দুর রশিদের দুই ছেলে ও ১ মেয়ে। হাসনাইন রাফি ২য় সন্তান। বড় ছেলেও প্রকৌশলী হিসাবে ঢাকাতে কর্মরত। একমাত্র মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। সে পড়ালেখা শেষ করে ঢাকাতে চাকুরি করেন।পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, বিয়ের অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ করতে না পারায় ছেলে জন্মের পর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২০১৭ সালে বিয়ের পর ফারহানার লেখা পড়া ও তার পিতার হঠাৎ মারা যাওয়ায় বিয়ে পিছিয়ে যায়।

তারপর করোনা এসে যাওয়ায় আরও পিছিয়ে যায়।জানা যায়, ছেলের বাবা আব্দুর রশিদ মাসখানেক আগে তাদের ফোন করে তার বৌমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নেয়ার কথা বলেন। ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠানের তারিখ ঠিক করা হয়। বৌমা ফারহানা তার গায়ে হলুদ ছাড়া কোন আনুষ্ঠানিকতা করবেন না বলে জানান। তার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা ভীষণ শখ। শখ পুরণ করতে এ অভিনব আয়োজন। আর সে অনুষ্ঠানকে ঘিরেই শখ পূরণ করেন ‘লেডি বাইকার’ খ্যাত ফারহানা। তবে তার এ কাজকে ভালো ভাবেই দেখছেন তার পরিবার বন্ধু ও প্রতিবেশীরা। তাদের দাবি, ফারহানা স্বাধীনচেতা মানুষ। আর নেটিজেনদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, অনেকেই তার প্রশংসা করলেও অনেকেই আবার তার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন।

বান্ধবী নওরিন জানান, ফারহানা আফরোজ যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর যশোর আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজে একসঙ্গে এইচএসসির পাঠ শেষ করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ড্যাফেডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। দুইজন দুই শহরের বাসিন্দা হলেও যোগাযোগ এবং বন্ধুত্ব ছিল অটুট। ফারহানা খুব ভালো মনের মানুষ, মিশুক এবং সেলফ ডিপেন্ডেডেট। ফারহানা এখন ড্যাফেডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে এইচআর-এ এমবিএ করছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু ও (ফারহানা) বাইক চালাতে পারে তাই শখ ছিল নিজের বিয়েতে বাইক রাইডিং করার। ও শো-অফ করতে চায়নি।

নেটিজেনরা বানোয়াট কথা বলে ওকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছে। প্রকৌশলী হাসনাইন রাফির বাবা অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুর রশিদ জানান, চাকুরি কালে আমি ইনস্পেক্টর হিসাবে অনেক মেয়েকে ট্রেনিং করিয়েছি। মহিলা সৈনিকদের ট্রেনিং করিয়েছি। মেয়েরা তো থেমে নেই। মেয়েরা পাইলট হচ্ছে, গাড়ি চালাচ্ছে। আর আমার পুত্রবধূ তো মটর বাইক চালিয়েছে। সে তো ইসলামের শরিয়াহ থেকে বের হয়ে যায়নি। আমার পক্ষ থেকে পুত্রবধূর প্রতি কোন অভিযোগ নেই। তাকে আমি একটা মটর বাইক কিনে দিব। সেটা ঢাকা থেকেও দিতে পারি এখান থেকেও দিতে পারি। তিনি অভিযোগ করেন কিছু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে পোস্ট দিচ্ছে যা ঠিক না। তিনি তার নাতি তাজ উদ্দিনের জন্য দেশবাসীর নিকট দোয়া কামনা করেন।

 

আপনার মতামত লিখুন :