বাংলাদেশকে চাপ নয়, প্রত্যাবাসনে উদ্যোগ নিন: জাতিসংঘকে সরকার

প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর ২০২০

রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা ভাসানচর দ্বীপটি ৩০ বছরের পুরোনো এবং নিরাপদ উল্লেখ করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক স্থানান্তর করা হয়নি, দ্বীপটিতে বসবাসের উপযোগী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।ভাসানচরে স্বাস্থ্যসেবা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সুবিধার কথা উল্লেখ করে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘সেখানে যারা যাচ্ছেন তাদের এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বল প্রয়োগ, ভয় দেখানো বা অর্থের ব্যবহারের কোনো প্রশ্নই আসে না।’

দ্বীপটিতে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ইতিমধ্যে ভাসানচর ও নোয়াখালীর মধ্যে নিয়মিত সমুদ্র-ট্রাক পরিষেবা চালু করেছে। বাংলাদেশ বলছে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সৃষ্ট সংকট মিয়ানমার তৈরি করেছে এবং এর সমাধান সম্পূর্ণ মিয়ানমারের মধ্যেই রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের ওপর অহেতুক ও অযৌক্তিক চাপ প্রয়োগের পরিবর্তে জাতিসংঘ/এনজিওগুলো/ আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী ও মানবাধিকার সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা বংশ পরম্পরা ধরে যে বিপর্যস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মুখোমুখি হচ্ছে সেদিকে মনোনিবেশ করতে হবে।

মিয়ানমার থেকে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়ার পর অসংখ্য সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসনচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ। পরিকল্পনা অনুসারে, কক্সবাজার থেকে প্রথম দফায় গত ৪ ডিসেম্বর ১ হাজার ৬৪২ এবং দ্বিতীয় দফায় গত ২৯ ডিসেম্বর ১ হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়া হয়।বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘকে রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতি দেখার জন্য মিয়ানমারে একটি কারিগরি ও সুরক্ষা মূল্যায়ন দল প্রেরণ এবং সেখানে প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতিও পরিদর্শনে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘এটি মনে রাখা উচিত যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। শুধু মানবিক কারণ থেকে বাংলাদেশ অস্থায়ী ভিত্তিতে তাদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। রোহিঙ্গারাও তাদের স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সে লক্ষ্যে সকলকে গঠনমূলকভাবে কাজ করা দরকার,’ বলছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা আরও বলছে, ‘মিয়ানমারের নির্বাচন এখন শেষ হয়ে গেছে। আমরা মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ও নিপীড়িত নাগরিকদের তাদের স্বদেশে দ্রুততার সাথে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃশ্যমান কর্মতৎপরতার প্রত্যাশায় রয়েছি। প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজে করে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নৌবাহিনীর জেটি থেকে প্রথম জাহাজটি ছেড়ে যায়। এরপর ধাপে ধাপে আরও চারটি জাহাজ ভাসানচরের পথে ছেড়ে যায়।

এর আগে, সোমবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসে করে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। রাতে তাদের রাখা হয় চট্টগ্রাম বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে। ভাসানচরের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রথম যাত্রায় রোহিঙ্গাদের অনেক বোঝাতে হয়েছিল। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে এবার নিজেরাই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। গত ৪ ডিসেম্বর যাদের আত্মীয়-স্বজন ভাসানচরে গেছেন তাদের কাছে সুযোগ-সুবিধার খবর শুনে অনেকেই সেখানে যেতে ইচ্ছা পোষণ করেছেন। সূত্র জানায়, উখিয়া ও টেকনাফের তালিকাভুক্ত (রেজিস্টার) ক্যাম্প ছাড়া বাকি সব ক্যাম্প থেকেই এবার রোহিঙ্গারা ভাসানচর যাচ্ছেন। উখিয়ার কুতুপালং-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৮ ডব্লিউ ক্যাম্প থেকেও যাচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার। উখিয়ার কুতুপালং-৪ নম্বর ক্যাম্প থেকে ২৭ ও কুতুপালং-২ ডব্লিউ থেকে ২৪টি পরিবার ভাসানচরে যাচ্ছে।

ভাসান চর আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক কমডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী জানান, দ্বিতীয় দফায় ১৭০০ বেশি রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হচ্ছে। নৌবাহিনীর কয়েকটি জাহাজে করে আজ তাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবির থেকে স্বেচ্ছায় ভাসানচর যেতে ইচ্ছুক এমন রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে উখিয়া কুতুপালং অস্থায়ী প্রত্যাবাসন ক্যাম্পে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে নিবন্ধন করা হয়। সেখান থেকে এসব রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।

সূত্র: ইউএনবি।

আপনার মতামত লিখুন :