শেরপুরে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা হবেনা

প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারি ২০২১

ফরিদ আহমদ শিকদার, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: করোনা ভাইরাসের কারনে প্রতিরোধে নবীগঞ্জের শেষ প্রান্ত শেরপুরে এবছর হবেনা ২শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। বারো মাসে তেরো পার্বনের একটি পার্বন পৌষ সংক্রান্তিকে ঘিরে প্রতিবছর সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার মিলনস্থল নবীগঞ্জের সীমান্তবর্তী শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর তীরে তিনদিন ব্যাপী মাছের মেলার আয়োজন করা হয়।

জানা যায়,সিলেট বিভাগের বৃহত্তর এ মাছের মেলাটি প্রায় দুই’শত বছর যাবৎ চলে আসছে। হাড় কাঁপানো শীতকে উপেক্ষা করে মেলাকে ঘিরে প্রতি বছর লক্ষাধিক ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করত শেরপুরে। মেলায় মৎস্য ব্যবসায়ীরা ঢালায় ঢালায় সাজিয়ে রাখতেন বিশাল আকারের মাছ।

এর মধ্যে বোয়াল, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উল্লেখযোগ্য। মেলায় মাছ ক্রয় করতে সবাই না আসলেও অনেকেই আসছেন মাছ দেখতে। কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক প্রজাতির মাছও এই মেলায় পাওয়া যেত। মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীর পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে হলেও রুপ নিয়েছিল সার্বজনীন উৎসবে। এই মেলায় ছোট মাছ থেকে শুরু করে আড়াই’শ কেজি ওজনের মাছেরও দেখা মিলত। মাছগুলো মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদ-নদী,খাল, বিল এবং হাওড়ের থেকে শিকার করে এনে মেলায় বিক্রি করা হতো বলে জানান সংশ্লিষ্ট অনেকে।

মেলাকে ঘিরে মৎস্য ব্যবসায়ীরা ১৫ দিন আগে থেকে মাছ মজুদ রেখে মেলায় আসার প্রস্তুতি নিতেন। পৌষ সংক্রান্তিকে সামনে রেখে হিন্দু ধর্মের সবাইকে মাছ কিনতে হবে এমন নিয়ম থাকলেও সেতু বন্ধনে আবদ্ধ থাকায় ভিন্ন ধর্মীরাও বড় বড় মাছ কিনতে পিছিয়ে থাকতো না। মেলাকে কেন্দ্র করে সবাই বড় মাছ কিনে আত্মীয়ের বাড়িতে উপহার পাঠাতেন। ফলে লোকদৃশ্যের বন্ধনে পরিণত হয়েছিন শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা।

উক্ত মেলায় মাছ ছাড়াও হস্ত শিল্প, গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী পণ্য, খেলনা সামগ্রী, নানা জাতের দেশীয় খাবারের দোকান, কাঠের তৈরী ফার্নিচার এবং সব ধরণের পণ্য পাওয়া যেত। মেলায় সস্তা দরে জিনিষপত্র ক্রয় করতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা ছুটে আসতেন এখানে।সব মিলিয়ে মেলাকে ঘিরে এলাকায় মাসব্যাপী সাজ সাজ রব শুরু হতো।

এবার করোনার কারনে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যে বাঁধা পড়ছে। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন,করোনাকালীন সময়ে বাড়তি সর্তকতার কারণে এ বছর ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলাটি হচ্ছে না।

 

আপনার মতামত লিখুন :