অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই গাইলেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান

প্রকাশিত : ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছে শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংক কর্মকর্তা, সরকারি কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন। ভয়াবহ বিক্ষোভের মাঝেই এবার অভ্যুত্থানের ‘যৌক্তিকতা’ তুলে ধরলেন বার্মিজ সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইং।

ক্ষমতা গ্রহণের পর সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রথম টেলিভিশনে ভাষণ দেন তিনি। এ সময় জেনারেল মিন অং বলেন, আটক নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চির দলের গত নভেম্বরের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তার ভাষণে বিক্ষোভকারীদের প্রতি হুমকির চেয়ে অভ্যুত্থানের কারণ ব্যাখ্যার দিকে গুরুত্ব ছিল বেশি। এছাড়া ভাষণে অভ্যুত্থানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

বেশকিছু এলাকায় বিধিনিষেধ আরোপসহ কারফিউ ও জমায়েত সীমাবদ্ধ করা শুরু করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গত সোমবার সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ দেশটির রাজধানী নেপিদোতে জড়ো হয়। মান্ডালা ও ইয়াঙ্গুনেও হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। ২০০৭ সালে ভিক্ষুদের বিক্ষোভের পর এটাই মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ।

বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংক কর্মকর্তা, সরকারি কর্মচারীসহ দেশটির বিভিন্ন পেশার মানুষ। মিয়ানমারের সর্ববৃহৎ শহর ইয়াঙ্গুনের কেন্দ্রস্থল সুলে প্যাগোডা থেকে প্রায় হাজার খানেক শিক্ষক পদযাত্রা করেছেন। এদিকে নেপিদোয় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ছোড়ে পুলিশ। এতে কয়েকজনের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বিবিসি নিউজকে বলেন, আজ (সোমবার) আমরা চাকরিজীবীরা বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা যেমন- চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও শিক্ষকরা পথে নেমেছি। আমরা দেখাতে চাই, আমরা সবাই এই বিক্ষোভে একসঙ্গে আছি। আমাদের উদ্দেশ্য এক— স্বৈরশাসনের পতন ঘটান।

আরও পড়ুন : অবশেষে বাইডেনকে ফোন করলেন মোদী

নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে জেনারেল মিন অং বলেন, নভেম্বরের নির্বাচনে ভোটার তালিকায় অনিয়ম তদন্ত করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন এবং নিরপেক্ষ প্রচারের অনুমোদন দেয়নি। নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, বড় ধরনের জালিয়াতি ও কারচুপির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সেনাপ্রধানের মতে, সবুজ সামরিক ইউনিফর্ম পরে নতুন নির্বাচন আয়োজনের প্রতিজ্ঞা করছি। এ নির্বাচনে যারা জয়ী হবে তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। সংস্কার করা নতুন নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচন তদারকি করবে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতা দখল করে। ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতা অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, এনএলডির কয়েকজন নেতাসহ সরকারের মন্ত্রীদের আটক করে রেখেছে সামরিক জান্তা সরকার। এছাড়া তাদেরকে আটকের পর এক বছরের জন্য দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। মিয়ানমারের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে।

আরও পড়ুন : ‘শর্ত না মানলে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নয়’

এ দিকে সারা বিশ্ব থেকেই মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অং সান সু চিসহ অন্যান্য বন্দীদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মিয়ানমারে অবরোধ আরোপের চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

আপনার মতামত লিখুন :