বগুড়ায় অক্সিজেন সংকটে ১৩ ঘণ্টায় ৭ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত : ২ জুলাই ২০২১

বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা (উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহকারী সরঞ্জাম) সংকটের কারণে সাতজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আরো ১০ জনের অবস্থা সংকটাপূর্ণ বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) রাত ৮টা থেকে শুক্রবার (২ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টায় এ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে ২০২০ সালের মার্চের শেষের দিকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়।

তখন সেখানে সিলিন্ডার দিয়ে করোনা রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হতো। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়লে একই বছরের জুনের শেষ দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধাযুক্ত ৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়। পরবর্তীতে শজিমেক হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১৩টি আইসিইউসহ ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সেখানেও রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় চলতি বছরের এপ্রিলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু করা হয়।

এদিকে কোভিড ডেডিকেডেট ২৫০ শয্যার মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২২৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। যাদের অধিকাংশেরই উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালটিতে বর্তমানে মাত্র দুটি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে। ফলে দুজনের বেশি রোগীকে একসঙ্গে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন (রক্তে ঘনীভূত অক্সিজেনের মাত্রা) ৮৭ এর নিচে তাদের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিক আমিন কাজল জানান, হাসপাতালটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু হলেও সবগুলো শয্যায় উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা যুক্ত করা হয়নি। এমনকি ৮ শয্যা নিয়ে চালু করা আইসিইউ ইউনিটেরও মাত্র দুটিতে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে। ফলে পুরো হাসপাতালের মধ্যে আইসিইউ ইউনিটের ওই দুটি শয্যায় কেবল উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন সররবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে।

এর বাইরে ভর্তি দুই শতাধিক রোগীকে হয় ফেস্ক মাস্ক অথবা রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ফেস্ক মাস্ক দিয়ে একজন করোনা রোগীকে প্রতি মিনিটে মাত্র ৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব। অন্যদিকে রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়। আর হাইফ্লোন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে একজন রোগীকে প্রতি মিনিটে ৬০ লিটার অক্সিজেন দেওয়া যায়।

ডা. শফিক আমিন কাজল হাসপাতালে ২২৩ জন রোগী ভর্তির তথ্য দিয়ে আরো বলেন, আমাদের এই হাসপাতালে এখন যেসব রোগী আসছেন তাদের বেশিরভাগেরই অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৬০ থেকে ৭২ এর মধ্যে। তাদের হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ করা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের হাসপাতালে শুধু আইসিইউ ইউনিটের দুটি শয্যায় ওই ব্যবস্থা রয়েছে। যে কারণে বিপুল সংখ্যক রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, রোগীদের মধ্যে যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এর ওপরে কেবল তাদের ফেস্ক মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচানো সম্ভব। আর যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এর নিচে কিন্তু ৮৭ এর ওপরে তাদের রিব্রিদার মাস্ক দিয়েও সুস্থ করে তোলা যায়। তবে যাদের অক্সিজেনের মাত্রা ৮৭-এর নিচে তাদের জন্য অবশ্যই উচ্চমাত্রার অর্থাৎ হাইফ্লোন্যাজাল ক্যানোলাযুক্ত অক্সিজেন প্রয়োজন। তা ছাড়া তাদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। আর অক্সিজেন সংকটের কারণে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ১৩ ঘণ্টায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরো অন্তত ১০ জনের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।

আপনার মতামত লিখুন :