কারুশিল্পে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছে সামিয়া আফরিন

প্রকাশিত : ৮ জুলাই ২০২১

জাবি প্রতিনিধি, সাগর কর্মকার: দীর্ঘ পরিশ্রম, অভিজ্ঞতা আর একাগ্রতাকে কাজে লাগিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়ােজিত ২৪তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে কারুশিল্পে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া আফরিন। ছোটবেলায় আঁকা-আঁকির খুব শখ থাকলেও একাডেমিক ভাবে আঁকা শেখা হয়নি কোথাও তার । তবে ছোট বেলাতে আব্বুর সাথে খেলতে খেলতে স্লেটে চক দিয়ে ফুল পাখি আঁকা দিয়েই হাতে খড়ি সামিয়ার। আব্বুর আঁকা সেই ফুল পাখি বেশ ভালো লাগতো তার। বাসার পাশে এক ম্যামের কাছে বাংলা ইংরেজি পড়ার এক ফাঁকে সপ্তাহে দু-একদিন ছবি আঁকা শেখাতেন । তখন থেকেই সামিয়া ছবি আঁকার প্রতি ভালোবাসা জন্মে ।

পেপার কাটিং করে রাখা বিভিন্ন ছবি দেখে আঁকার চেষ্টা করা ছাড়াও শুক্রবারের বিকেলে শুধু নিজের মত করে পেন্সিল রঙে, প্যাস্টেল রঙে আর নাজুক হাতের জলরঙে ছবি আঁকার ধরাবাঁধা রুটিন চলতে থাকে। তবে আঁকা আঁকির প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক থাকলেও চারুকলায় পড়াশোনা করবে তা আগে ভাবেনি । এইচএসসি’র আগে অব্দি ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিষয়ে পড়ার পাশাপাশি আঁকা আঁকি চালিয়ে যাবে। কিন্তু তার আম্মু আব্বুর খুব ইচ্ছা ছিলো সামিয়া মেডিকেলে পড়বে । আম্মু-আব্বুর ইচ্ছার কাছে হার মেনে সামিয়া মেডিকেল এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে । কিন্তু পরীক্ষার আগে সামিয়া খুব অসুস্থ হয়ে পরায় মেডিকেলে তার আর পড়া হয়ে ওঠেনি ।

চার-পাঁচ মাস যাবত অসুস্থ থাকায় আর ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোনো প্রস্তুতি না নেয়ায় স্বভাবিক ভাবেই এর ভর্তি পরীক্ষায়ও অকৃতকার্য হয় । এর পরের লম্বা সময়টাতে পড়াশুনা না থাকায় অনেক ছবি আঁকতো সে আর তখনই মূলত চারুকলায় পড়ার সিদ্ধান্ত নেয় সামিয়া । তখন তার আব্বু-আম্মুও আর বাঁধা দেয়নি। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় পড়াশোনার যাত্রা শুরু । তবে ছোটবেলা থেকে একাডেমিক ড্রইং না শেখার কারণে প্রথম বর্ষে তার ড্রইং এর হাত অন্যদের তুলনায় কাঁচা থাকলেও বেশ পরিশ্রমের মাধ্যমে তা আয়ত্ত করে নেয় ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্টের উপভোগ্য অনুষ্ঠান, ক্লাস আর হল লাইফ বন্ধুদের সাথে প্রচুর আনন্দে কাটছিলো। কিন্তু করোনা মহামারী কারণে ক্লাস বন্ধ হয়ে যাওয়াতে কোনো কাজ হাতে নেই এমন সময় কিছু একটা করতে হবে এই যখন চিন্তা তখন মনে পরলো অনেক দিন আগে কেনা ১২”×৮” ইঞ্চির একটা কাঠের কথা । ছোট মিনিয়েচার টাইপ কাজ করার ইচ্ছা ছিল তাই কাঠটাকে চার বা ছয় খন্ড করে কাজ করবে ভাবছিলো ।

এ পর্যন্ত কাঠে পাখির কোনো কাজ করিনি তাই পাখিই করবে ঠিক করে । কিন্তু এত ছোট কাঠে কোন পাখি নিয়ে কাজ করা যায়! হঠাৎ মনে পরলো টুনটুনি আর চড়ুই পাখি তো খুব ছোট এই পাখিই এই কাঠের উপযুক্ত । এই দুই পাখি নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে দেখতে পায় টুনটুনি পাখির লাইফস্টাইল খুবই মজাদার । তাই টুনটুনি ই ফাইনাল । তারপর নিজের মত টুনটুনির লাইফ সাইকেলের ছয়টা ছোট ছোট লেআউট করে কাজ শুরু করে সামিয়া। তবে তার কোনো স্টুডিও না থাকায় ঘরেই এক কোনায় টেবিলে কাজ শুরু করে । কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে করোনা আক্রান্ত হয় ।

নিজের করা কাজের সম্পর্কে সামিয়া বলে ‘মায়িক’ কাজটা করা শেষেও আমার একই অনুভূতি ছিল বলা যায় না, একটু বেশিই অনুভূতি কাজ করেছে কারণ অনেকটা সময় নিয়ে কাজটা করেছি । কাজটা শুরু করার আগে মনে হয়েছিল যে এত ডিটেইল বোধহয় করা সম্ভব হবে না । কিন্তু পুরো কাজ সুন্দর করে শেষ করার পর সার্থকতার একটা ভালোলাগা কাজ করেছে । সব কাজের শেষেই একটা আনন্দ কাজ করে । একইসাথে খারাপও লাগে কারণ এই কাজের সাথে আর সময় কাটানো হবে না। করােনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ভার্চুয়ালি এই প্রদর্শনীর আয়ােজন করা হয়েছে।

শিল্পকলা একাডেমির ওয়েবসাইটে www.shilpakala.gov.bd  / www.facebook.com/shilpakalapage প্রদর্শনী উপভােগ করা যাবে।

 

আপনার মতামত লিখুন :