বিপিডব্লিউএন’র কৌশলগত পরিকল্পনা পুলিশে নারীর প্রতিনিধিত্ব সুসংহত করবে: আইজিপি

প্রকাশিত : ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাংলাদেশ পুলিশে নারী পুলিশের সর্বোচ্চ অবদান নিশ্চিত করা, পুলিশের সব পদ ও ইউনিটে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, নারী পুলিশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সমর্থন, পুলিশে নারীদের জন্য উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, জেন্ডার সংবেদনশীল পুলিশ পরিষেবা প্রদান এবং সমাজে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশলগত লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) তিন বছর (২০২১-২০২৩) মেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের হল অব ইন্টেগ্রিটিতে এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও বিপিডব্লিউএন’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক ড. বেনজীর আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো। যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন ইউএন উইমেন’র সিনিয়র পুলিশ এডভাইজার জেন টাউন্সলে। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিপিডব্লিউএন’র প্রেসিডেন্ট ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি (প্রটেকশন অ্যান্ড প্রটোকল) আমেনা বেগম।

অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, বিপিডব্লিউএন’র সদস্যা এবং ইউএন উইমেন বাংলাদেশ’র হেড অফ অফিস গীতাঞ্জলি সিং ও হেড অব সাবঅফিস ফ্লোরা ম্যাকুলা (Flora Macula) উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের সব ইউনিট প্রধান, সব থানার নারী ও শিশু ডেস্কে কর্মরত কর্মকর্তা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্য অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক পুলিশে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিপিডব্লিউএন’র তিন বছর মেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ পুলিশে নারীদের প্রতিনিধিত্ব সুসংহত হবে। নারীদের সহায়ক কর্মপরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীল পুলিশ পরিষেবা প্রদান নিশ্চিত হবে।

তিনি বলেন, বিপিডব্লিউএন ১৫ হাজার নারী পুলিশ সদস্যের এক বিশাল পেশাজীবী সংগঠন। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ নেটওয়ার্ক গত ১৩ বছরে দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসনীয় অবদান রেখেছে এবং তাদের অস্তিত্ব জানাতে সক্ষম হয়েছে। নারী সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি এবং নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরিতেও সংগঠনটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ পুলিশে নারী সদস্যদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের কর্মপরিবেশ অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এ লক্ষ্যে তিনি নারী সহকর্মীদের সহযোগিতা করার জন্য পুরুষ সহকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নারীদেরকেও অধিকার সচেতন হতে হবে।

বেনজীর আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের সব থানায় নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ডেস্ক চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় বাংলাদেশ পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার রয়েছে, যেখানে ভিকটিম নারী ও শিশুদের সহায়তায় পুলিশ কাজ করছে। ভবিষ্যতে নারী ও শিশুর কল্যাণে এ ধরনের উদ্যোগ আরও বেগবান করা হবে বলেও জানান তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার বুলিংয়ের শিকার নারীদের সহায়তায় পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন ফেসবুক পেজ চালুর কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, সাইবার বুলিংয়ের শিকার নারীরা এ পেজের মাধ্যমে তাদের অভিযোগ জানাতে পারছেন। নারী পুলিশ সদস্যদের দিয়েই এ পেজটি পরিচালনা করা হয়, ফলে এখানে নারীরা সহজেই তাদের সমস্যা এবং অভিযোগের কথা তুলে ধরতে পারছেন। এ পেজের মাধ্যমে ইতোমধ্যে অনেক নারীকে সাপোর্ট দেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জেন টাউন্সলে বিপিডব্লিউএন’র কৌশলগত পরিকল্পনাকে বড় ধরনের অর্জন আখ্যা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে আরও জেন্ডার সংবেদনশীল করতে এ পরিকল্পনা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। তিনি বাংলাদেশ সফরকালে পুলিশের সাথে তার পেশাগত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। মিয়া সেপ্পো বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে জেন্ডার সংবেদনশীল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতিসংঘ কাজ করছে। তিনি রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নারী পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদানের কথা উল্লেখ করেন।

আমেনা বেগম তার স্বাগত বক্তব্যে বিপিডব্লিউএন’র কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে এ কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা কামনা করেন। আইজিপি অন্যান্য অতিথিদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কৌশলগত পরিকল্পনার মোড়ক উম্মোচন করেন এবং এটি বিপিডব্লিউএন’র ওয়েবসাইটে আপলোড করেন।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করতে লিঙ্কে ক্লিক করুন…

 

আপনার মতামত লিখুন :