নতুন ফিচার চালু না করলে লক হয়ে যাবে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট

প্রকাশিত : ১৩ অক্টোবর ২০২১

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নতুন একটি নোটিফিকেশন পেয়েছেন অনেকেই, যেখানে বলা হচ্ছে যে, ২৮শে অক্টোবরের মধ্যে ফেসবুক প্রোটেক্ট নামে একটি ফিচার টার্ন অন বা চালু করতে হবে। তা না হলে ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট লক হয়ে যাবে। এ ধরনের বার্তা পেয়ে অনেকেই ঘাবড়ে যাচ্ছেন। এটা কোন ধরনের স্প্যাম কিংবা ভাইরাস কিনা তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার এরইমধ্যে ফিচারটি অন করে দিয়েছেন।

ফেসবুক ব্যবহারকারী মোর্শেদ হাসিব জানান, গত পরশু রাতে এ ধরনের নোটিফিকেশন পেয়েছেন তিনি। পাওয়ার পর নিজের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ার কারণে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘পরে অবশ্য ফেসবুকের ব্যাখ্যাগুলো দেখে ফিচারটি টার্ন অন করেছি’। শারমিন রিমা নামে একজন জানান, প্রথমে নিজের ফেসবুক প্রোটেক্ট ফিচারটি চালু করার বিষয়ে একটি ইমেইল পান তিনি। যেখানে লেখা ছিল যে, ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করুন।

তবে তখন সন্দেহ হওয়ার সেটি এড়িয়ে যান। পরে ফেসবুক অ্যাপেও একই ধরনের নোটিফিকেশন পান মিজ রিমা। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে লগ ইন করেই নিউজ ফিডের একদম উপরে দেখি যে এটি চালু করার কথা বলা হচ্ছে। তখন শিওর হলাম যে, এটা ফেসবুকের পক্ষ থেকেই দেয়া হয়েছে’। তিনি জানান, নিশ্চিত হওয়ার পর প্রোগ্রামটি তিনি চালু করেছেন। বলেন, ‘বেশি জটিল কিছু নয়। শুধু কয়েকটি বিষয় কনফার্ম করতে হয়েছে এবং ফেসবুক থেকে জানানো হয়েছে যে অ্যাকাউন্টটি সুরক্ষিত রয়েছে, কোন ঝামেলা নেই’।

ঢাকার বাসিন্দা শারমিন আজাদ শান্তা অবশ্য জানিয়েছেন যে, ফেসবুক নোটিফিকেশন বা ই-মেইল- কোনটাতেই এ ধরনের কোন নোটিফিকেশন তিনি পাননি।

ফেসবুক প্রোটেক্ট কী?

ফেসবুকের ওয়েবসাইটে ফেসবুক প্রোটেক্ট সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বেশ কিছু অ্যাকাউন্টকে বাড়তি নিরাপত্তা দিতে তারা একটি নতুন ফিচার তৈরি করেছে যার নাম দেয়া হয়েছে ফেসবুক প্রোটেক্ট। এটি একটি ভলানটারি (ঐচ্ছিক) প্রোগ্রাম যা নির্বাচনী প্রার্থী, তাদের প্রচারণা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অ্যাকাউন্টকে বাড়তি সুরক্ষা দেবে।

প্রাথমিক ভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির নির্বাচনের সময় সেখানকার প্রার্থীদের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের সুরক্ষায় এই প্রোগ্রামটি তৈরি করা হয়েছিল। পরে এটি কানাডাতেও চালু করা হয়। তবে ২০২১ সালে এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য সরবরাহ করা হবে বলেও জানানো হয়। এ বিষয়ক আপডেটও ফেসবুকের মাধ্যমেই জানানো হবে বলে ফেসবুক জানায়।

এমন নোটিফিকেশন কেন পাঠাচ্ছে ফেসবুক?

ফেসবুকে নতুন এই ফিচারটি অ্যাড করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে ফেসবুক। ফিচারটি চালু করতে গেলে এসব ব্যাখ্যার কথা জানানো হয়েছে ফেসবুকের পক্ষ থেকে। সেখানে যে বার্তাটি দেয়া হচ্ছে সেটি হচ্ছে, ‘আপনার অ্যাকাউন্টটি অনেক মানুষের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। যার জন্য আপনার শক্তিশালী নিরাপত্তা দরকার।

আপনার অ্যাকাউন্টের মতো সব অ্যাকাউন্টের রক্ষায় এই নিরাপত্তা প্রোগ্রাম তৈরি করেছে ফেসবুক’। ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তারা এরই মধ্যে লগ ইনের ক্ষেত্রে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করেছে। পরবর্তীতে প্রোগ্রাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর মাধ্যমে ফেসবুক প্রোটেক্ট পুরোপুরি চালু করা হবে।

ফেসবুক প্রোটেক্ট কেন আপনার অ্যাকাউন্টের জন্য দরকার

ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করার সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে লার্ন মোর অপশনে গেলে সেখানে ফেসবুক প্রোটেক্ট কেন জরুরি সে বিষয়ে বলা হয়। এতে বলা হয়, হ্যাকাররা সব সময় সেই অ্যাকাউন্টগুলোর প্রতিই আগ্রহী হয়, যেগুলোতে অনেক বেশি ফলোয়ার থাকে, যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ পেইজ পরিচালনা করে কিংবা যার কমিউনিটি সিগনিফিক্যান্স বা গুরুত্ব রয়েছে।

এ ধরণের টার্গেটেড অ্যাটাক বা উদ্দেশ্যপূর্ণ হামলা রোধ করতেই ইন্নত নিরাপত্তার এই প্রোগ্রামটি চালু করার অনুরোধ করেছে ফেসবুক। এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ফেসবুকের এই ফিচারটি অ্যাকাউন্টের মৌলিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো যেমন ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড বা টু-ফ্যাক্টর অথেনটিফিকেশনের পাশাপাশি আরো কিছু বাড়তি নিরাপত্তা দেবে।

তিনি বলেন, ‘এর পরবর্তীতে অ্যাকাউন্টধারীর পেইজে কোন পোস্ট আসার আগে ফারদার (আরো) অথেনটিফিকেশন (যাচাই) হয়ে আসবে। যাতে ওই অ্যাকাউন্টটিকে আর কেউ অ্যাবিউজ করতে না পারে, থ্রেট (হুমকি) থেকে রক্ষা করতে এই উদ্যোগ’।

সবাইকে নয় বরং ফেসবুক যাদের মনে করছে যে, তারা কোন ধরণের হুমকির মুখে পড়তে পারে তাদেরকেই এ ধরনের বার্তা পাঠানো হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

অ্যাডভান্সড সিকিউরিটিতে কী কী রয়েছে?

এর আওতায় লগ ইনের ক্ষেত্রে আরো কঠোর নিয়ম আরোপ করা হবে যাতে অনুমোদনহীন কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারে। এছাড়া ফেসবুক যদি আপনার অ্যাকাউন্টে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন লগ ইন শনাক্ত করে, তাহলে সেটি যে আপনি সেটা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত কিছু ধাপ পেরুতে হবে।

ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করা থাকলে প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা পদক্ষেপ আরো ভাল করতে কাজ করবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এর ফলে অ্যাকাউন্টের ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। এছাড়া ফেসবুক কোন নতুন সিকিউরিটি প্রোগ্রাম চালু করলে সেটি আপনাকে জানানো হবে যাতে আপনি অন্যদের তুলনায় আগে সেটির সুবিধা পান।

ফেসবুকের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, এই প্রোগ্রামটি আপনার অ্যাকাউন্টে অন্তর্ভুক্ত করার পর সেটি আরো দৃঢ় নিরাপত্তা সুরক্ষা পাবে যেমন টু-ফ্যাক্টর অথেনটিফিকেশন চালু হয়ে যাবে এবং সম্ভাব্য হ্যাকিংয়ের বিষয়ে নজর রাখা হবে।

কীভাবে এটি চালু করা যাবে?

ফেসবুকের ওয়েবসাইটে জানানো হয় যে, যারা এই ফিচারটি চালু করতে পারবেন তারা ফেসবুকের মাধ্যমেই এটি জানতে পারবেন। যারা এর আওতায় পড়বেন তারা ফেসবুকের সেটিংসে গিয়ে সিকিউরিটি অ্যান্ড লগ-ইন অপশনে গেলে ফেসবুক প্রোটেক্ট নামে অপশন পাওয়া যাবে। সেখান থেকে ফেসবুক প্রোটেক্ট অপশন অন করা যাবে।

বিবিসি বাংলা

আপনার মতামত লিখুন :