রাষ্ট্রধর্ম বাতিলসহ ৮ দাবি শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের

প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর ২০২১

দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের বিচার এবং ওয়াজ মাহফিলে সাম্প্রদায়িক ও নারীবিদ্বেষমূলক বক্তব্য বন্ধের উদ্যোগ নেওয়াসহ আট দফা দাবি জানান দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজন এবং সাংবাদিকরা। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-সাংবাদিকদের যৌথ উদ্যোগে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে রাজধানীতে বিক্ষোভকালে এই দাবি তোলা হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজামণ্ডপ, বাড়িঘর, দোকানপাটে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা, ভাঙচুর, হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার এবং বিচারের দাবিতে জানিয়ে সাহিত্যিক, শিল্পী ও সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, কুমিল্লার এক পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ অবমাননা করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে যেভাবে পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে, তা গভীর ষড়যন্ত্রমূলক। এর রেশ ধরে চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেছে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী।

বক্তারা আরও বলেন, সরকারের বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। আমরা দেখেছি অতীতেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা হয়েছে, যার একটিরও সঠিক তদন্ত হয়নি, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। একাত্তরে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকল ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী গত পঞ্চাশ বছরে সাম্প্রদায়িকতা দূর হয়নি।

সমাবেশে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি ৮ (আট) দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।

দাবিগুলো হচ্ছে: • এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করা।

• রামু, নাসিরনগর, শালা, কুমিল্লা, হাজীগঞ্জ, নোয়াখালী ও রংপুরে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার প্রকৃত কারণ জনসম্মুখে প্রকাশ করা ও প্রতিটি ঘটনার বিচার করা। এবং অতীতে সাম্প্রদায়িক হামলার হোতা অভিযুক্ত অনেক ব্যক্তিকে রাজনৈতিক দলগুলোতে প্রকাশ্যে কর্মরত দেখা যায়। তাদেরকে চিহ্নিত করে বহিষ্কার ও বিচার করা। • ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ধর্মসভা তথা ওয়াজ মাহফিলে সাম্প্রদায়িক ও নারীবিদ্বেষমূলক বক্তব্য বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া।

• স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তক থেকে সাম্প্রদায়িক পাঠ বিলুপ্ত করে অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করাতে হবে।

• বহু জাতি এবং বহু ধর্মসম্প্রদায়ের এই দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করা।

• সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সরকারি উদ্যোগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আড্ডাধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা।

• সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশের সংস্কৃতিচর্চার (নাটক, গান, মৃত্যু, যাত্রাপালা, পালাগান, নাউলগান) অগ্রগতি ঘটানো। পাশাপাশি স্বাধীন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় প্রাণিত করা। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে পাঠাগার ও সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন করা।

সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তৃতা করেন, লেখক আনিসুল হক, চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা, কবি চঞ্চল আশরাফ, সাংবাদিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, সাংবাদিক মনির হায়দার, জুলহাস নূস, এফ এম শাহীন, ঝর্ণা রহমান, মাসুদ পথিক, মৌটুসি বিশ্বাস, নাজমুল হক প্রধান, কবি টোকন ঠাকুর, লেখক পারভেজ হোসেন, রেজা ঘটক, মুনা চৌধুরী, লীনা পারভীন, মাসুম আজিজুল বাসার, শাকিরা পারভীন সোমা, হুমায়ূন কবীর ঢালী, কবি শাহেদ কায়েস, মোজাফফর হোসেন, লোপা মমতাজ, মুভিয়ানার বেলায়েত হোসেন মামুন, কানিজ আকলিমা সুলতানা, জোবায়দা নাসরিন, কৃষ্ণা সরকার, আলতাফ শাহনেওয়াজ, আফরোজা সোমা প্রমুখ।

এ সময় অন্যদের মধ্যে ইশরাত তানিয়া, মামুন খান, আহমেদ শিপলু, অরবিন্দ চক্রবর্তী, লেখক ও সাংবাদিক হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, খালেদ রাহী, জয়দীপ দে, রনি রেজা, অপু মেহেদী, মানজারে হাসান মুরাদ, রঞ্জনা বিশ্বাস, অপর্ণা হালদার, জাহারা জাহান পার্লিয়া, রিপন আহসান ঋতু, দুর্জয় খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মতামত লিখুন :