ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় আমনে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা

প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রোপা আমনের ক্ষেতে সবুজের সমারোহ। মাঠে মাঠে দোলা খাচ্ছে আমন ধানের গাছ । মাঠের ধানকে ঘিরে স্বপ্নের জাল বুনছেন স্থানীয় কৃষকরা। গত বোরো মৌসুমে ধান আবাদে ফলন ভালো হওয়ায় এবার আমনে কৃষকদের উৎসাহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আমন ধান রোপণের পর জমিতে ভালো পরিচর্যা নেওয়ায় মাঠের অবস্থা খুবই ভালো। এখন পর্যন্ত যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে স্থানীয় কৃষকরা বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, বোরো আবাদের চেয়ে আমনে তদের খরচ কম হওয়ায় এ চাষে তারা বেশি লাভবান হবে। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ মৌসুমে ধানের ফলন ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, খড়মপুর, দুর্গাপুরসহ উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ, ধরখার এলাকায় যে দিকে চোখ যায় মাঠে শুধু ধান ক্ষেত চোখে পড়ে।

এরই মধ্যে বেশিরভাগ জমিতে ধানের শীষ বের হতে শুরু হয়েছে। আবার কোনো কোনো জমিতে আগাম ধান পাকতে শুরু করেছে। ধানকে ঘিরে স্থানীয় কৃষকরা নানা রকমের স্বপ্ন বুনছেন। সকাল বিকেল তারা যেন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সঠিক সময়ে চারা রোপণ, নিবিড় পরিচর্যা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়া ও সার দেয়া সবই করেছে স্থানীয় কৃষকরা। সেই সঙ্গে ফলন ভালো করতে নিয়মিত কৃষি কর্মকর্তারা তদারকিও করছেন। তারা রোগ বালায়ের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদেরকে ধান জমিতে কঞ্চি ও গাছের ঢাল পুঁতে পাখি দিয়ে পোকা মাকড় দমনে তারা উৎসাহিত করছেন।

পৌর এলাকার দেবগ্রামের কৃষক মো. সবুর হোসেন জানান, এ মৌসুমে তিনি ১০ বিঘা জমিতে উন্নত বীজ দিয়ে আমন ধান রোপন করেন তিনি। আমন রোপণ করার পর পর কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে পানি নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়নি। সঠিক ভাবে জমির পরিচর্যা করায় এখন ধান গাছের থোকায় থোকায় শীষ ধরেছে। জমির যে অবস্থা বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি বিঘাতে ১৭-১৮ মণ ধান পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

ফলন ভালো না হওয়ায় এক সময় ধান আবাদে অনেকটাই অনিহা তৈরি হয়। ভাল বীজ না হওয়ায় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ফসল নষ্ট হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেটি হচ্ছে না। বোরো ও আমনে বিঘাপ্রতি ১৮-১৯ মণ ধান পাচ্ছেন বলে জানান। তিনি বলেন, বোরো ধান আবাদে জমি তৈরি, চারা লাগানো, পানি, সার, কীটনাশক থেকে শুরু করে ধান কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা। আমনে এর অর্ধেকও খরচ হয় না বরং ফলন ভালো হয়। কৃষক মো. ফরিদ মিয়া জানান, এ মৌসুমে তিনি ৮ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আমন ধান আবাদ করেছেন। সঠিকভাবে পরিচর্যা নেওয়ায় বর্তমানে জমির অবস্থা খুবই ভালো। আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে জমির ধান কাটতে পারবেন বলে জানান।

মোগড়া ইউপির কৃষক খোরশেদ মিয়া জানান, দিন দিন কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে। উন্নত বীজ হওয়া তিনি ধান চাষে লাভের মুখ দেখছেন। এ মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ করেন। ধানের চেয়ে আমন আবাদে কৃষকের খরচ অর্ধেক কম হয়। তবে বোরোর চাইতে আমন ধান ফলন আরো ভালো হয়। উন্নত বীজ হওয়ায় বর্তমানে তার ধান জমির যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হয় বিঘা প্রতি ১৮-২০ মণ ধান পাওয়া যাবে।

তারাগন এলাকার কৃষক মিলন মিয়া জানান, রোধ বৃষ্টি ভিজে দিন রাত পরিশ্রম করে ৮ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ করা হয়। বর্তমানে ধান জমিতে শীষ বের হচ্ছে। জমির দিকে তাকালে মন জুড়িয়ে যায়। আশা করছেন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, প্রথম দিকে টানা বৃষ্টিপাত হলেও সময় মতো পানি চলে যাওয়ায় বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করা যায়। তাছাড়া ফলন ভাল করতে সার্বিকভাবে স্থানীয় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

আপনার মতামত লিখুন :