বাউফলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিশুদের দিয়ে ইলিশ শিকার

প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর ২০২১

নিষেধাজ্ঞা কালীন শিশুদের দিয়ে ইলিশ শিকারের প্রবানতা ক্রমশই বেড়েছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়।জেল জরিমানা থেকে বাঁচার জন্যই এ ধরনের কাজে নিজ সন্তান ব্যবহার করছেন অভিভাবকগণ। আবার কোন কোন ব্যক্তি টাকা প্রলোভন দেখিয়ে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জাল ও নৌকা দিয়ে নদীতে নামিয়ে দিচ্ছেন। সম্প্রতী তেঁতুলিয়া নদীতে মৎস বিভাগ ও নৌ-পুলিশের যৌথ অভিযানে ২২ জন আটক হলে ১২জনই অপ্রাপ্ত বয়স্ক।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সরকার মা ইলিশের নির্ভিগ্নে প্রজননের জন্য ৪অক্টোবর থেকে ২৫অক্টোবর টানা ২২ দিন মা ইলিশ বিক্রি, মজুত, শিকার, ও পরিবহন করা নিষেধাজ্ঞা করে। সরকারী ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে রয়েছে জেল জরিমানার বিধান। জেলেরা যাতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নদীতে ইলিশ শিকার করতে না পারে এর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিয়মিত চলে নদীতে টহল। নদীতে টহল দিতে গিয়ে প্রশাসনের হাতে আটক হয় অসাধু জেলেরা।

উপজেলা মৎস কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, চলতি নিষেধাজ্ঞা সময়ে ৫২জন জেলে আটক হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬জন জেলেকে নিয়মিত মামলা দেওয়া হয়েছে বাকী ১৬জন জেলে শিশু ও কিশোরর হওয়ায় মুচলেকার মাধ্যমে অভিবাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ সকল শিশু ও কিশোর অধিকাংশই উপজেলার চরবেষ্ঠিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন ও ভোলা জেলার রোহান উদ্দিনের চর ছাচরা এলাকার জেলে পরিবারের সন্তান।

হতদরিদ্র পরিবারের অভিবাবকরা জেল জরিমানা থেকে রেহাই পেতে নদীতে নিজ শিশু সন্তানদের নামিয়ে দেয়। মাছ শিকার করতে গিয়ে শিশুরা যখন প্রশাসনের হাতে আটক হয় তখন প্রশাসন সার্বিক বিবেচনায় মুচলেকা নিয়ে এদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার কখনও কখনও অভিবাকদের ডেকে এনে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই সুযোগটা পেয়ে ওই অসাধু জেলেরা নিজ শিশু সন্তানদের নদী নৌকা জাল দিয়ে নামিয়ে দেয়। আবার কোন কোন ব্যাক্তি টাকার প্রলোভন কিংবা জোর করে মাছ শিকারে বাধ্য করেন।

প্রশাসনের হাতে আটক ভোলা জেলার সাচরা গ্রামের মান্নান মোল্লার ছেলে মো. রমজান (১২) বলেন, ভোলার বোরহান উদ্দিনের মহসিন নামে এক ব্যাক্তি টাকার প্রলোভন দিয়ে তাদেরকে জাল নৌকা দিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ শিকারের জন্য পঠিয়েছেন। একই গ্রামের মো. মুন্সি মোল্লার মো. ইয়াছিন (১২)লোকামান মৃধার ছেলে রাব্বি (১১) করিম মৃধার ছেলে মো. রিফাদ (৮) দুলাল মোল্লার ছেলে এরশাদ মোল্লা (১০) একই কথা বলেন।

বোরহান উদ্দিন উপজেলার দেউলা গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে ফয়সাল আহম্মেদ (১০) পুলিশের হাতে আটক হয়ে কান্না করতে ছিল। তারে জিজ্ঞাস করতেই কান্না করতে করতে বলতে ছিল, আব্বায় রাইতে নৌকায় উডাইয়া দিছে। যা মাছ পাইলে হেইয়া দিয়া তোরে মোবাইল কিন্না দিমু। আমি হের লাইগ্যাই মাছ ধরতে আইছি।

উপজেলার চরাচাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠির জীবন মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন স্লোব বাংলাদেশ এর কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ শিশুদের দিয়ে অপরাধ করানো যা প্রত্যক্ষভাবে অভিবাবকদের মদদতে সংঘটিত হচ্ছে যা সত্যিই দুঃখ জনক। গত দুই বছর ধরে আমরা এ বিষয়টি লক্ষ করছি। চলতি বছর আমরা এ বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে জেলে পল্লীতে কাজ করবো।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, বিগত বছরের চেয়ে এবছর শিশুদের দিয়ে মাছ শিকারের প্রবাণতা খুবই বেশি। চলতি নিষেধাজ্ঞা সময়ে একই শিশু কয়েকবার আটক হওয়ার ঘটনা ঘটছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, শিশুদের এ ভাবে ব্যবহার করা এটা খুবই উদ্বেগের কারন। এ বিষয়ে জেলে পরিবারের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :