কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যার ঘটনায় অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০২১

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহার মৃত্যুর ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি এলজি, একটি পাইপগান, বোমাসদৃশ বস্তু, ককটেল, দুটি জামা ও ব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বিকালে নগরীর সংরাইশ বড় পুকুর পাড় এলাকা থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনওয়ারুল আজিম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে পুলিশ সংরাইশ বড় পুকুরপাড় এলাকার সীমানা প্রাচীরঘেরা একটি স্থান থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করে। ধারণা করা হচ্ছে, কাউন্সিলর সোহেল হত্যাকাণ্ডে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। এই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

ঘটনার জের ধরে ঘটনাস্থল ও এর আশেপাশের এলাকায় সোমবার রাত থেকে হামলা ও ভাঙচুর আতঙ্কে অনেকেই বাড়ি ছাড়া। সোমবার রাতে হামলা ও ভাঙচুরের সময় আতঙ্কে সুজানগর এলাকার বাসিন্দা বাখরাবাদ গ্যাসের কর্মচারী শাহীনুর ইসলাম (৫৭) হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এদিকে এ ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি। বিকালে এলাকা থেকে কিছু বোমা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, সোমবার বিকাল আনুমানিক সোয়া ৪টার দিকে কাউন্সিলরের অফিসের আশেপাশের রাস্তা ও গলিতে কয়েকটি গ্রুপে সন্ত্রাসীরা বিভক্ত হয়ে গুলি চালায়।

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কাউন্সিলর সোহেলের ব্যক্তিগত সহকারী বাদল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, কালো পোষাক পরা সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে গুলি চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ সাহাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এদিকে প্রাথমিক তদন্তে স্থানীয় মাদক কারবারি শাহ আলমের জড়িত থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসায় তাকে আটক করার চেষ্টা চলছে। তাকে আটক করতে পারলে ঘটনার পুরো রহস্য বের হয়ে আসবে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।’

দুইটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর সোমবার রাতে নগরীর সুজানগরে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া সোমবার রাতে দফায় দফায় সুজানগর, বউ বাজার, নবগ্রাম এলাকার দোকানপাট ও বিভিন্ন বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ সাহার লাশ তাদের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় শত শত নারী-পুরুষ তাদের লাশ এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমান। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহতদের আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী। পরে বাদ জোহর পাথুরিয়াপাড়া মসজিদ-ইদগাহ মাঠে সোহেলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজায় বক্তব্য রাখেন, কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, মহানগর আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম টুটুল, মহানগর যুবলীগের আহবায়ক আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ শহীদ প্রমুখ। পরে তার লাশ স্থানীয় একটি কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। হরিপদের স্ত্রী-সন্তান না থাকায় তার লাশ সাহাপাড়া মন্দিরে রাখা হয়। সেখানে তার স্বজনসহ এলাকার লোকজন ভিড় জমান। পরে নগরীর টিক্কারচর শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

এদিকে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ মঙ্গলবার বিকালে নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার সংরাইশ বড় পুকুরপাড় এলাকা পরিত্যক্ত অবস্থায় তিনটি ব্যাগ তল্লাশি করে দুটি এলজি, ১টি পাইপগান, ১৫-২০টি অবিস্ফোরিত হাতবোমা, দুটি কালো জামা ও ১২ রাউন্ড তাজা বুলেট উদ্ধার করে। কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। হামলায় জড়িতদের সনাক্ত ও আটকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আপনার মতামত লিখুন :