সু’চির বিরুদ্ধে রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: জাতিসংঘ

প্রকাশিত : ৬ ডিসেম্বর ২০২১

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে উস্কানি দেওয়া ও করোনা বিধিনিষেধ ভঙ্গের অভিযোগে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিকে যে সাজা দেওয়া হয়েছে, তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মাইকেল বেশেলেট সোমবার এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত আদালতে একটি ভুয়া বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের যে সাজা ঘোষণা করা হলো- তা পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এই রায়ের মাধ্যমে শুধু যে ব্যাপকভাবে তার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাই নয়; বরং রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে মিয়ানমারের বর্তমান অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের একটি দরজাও বন্ধ হয়ে গেছে। সু চির কারাবাসের সাজা মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকটকে গভীর এক খাদে ফেলেছে- মন্তব্য করে জাতিসংঘের হাই কমিশনার বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো, এই সংকট শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে নিরসনের যে পথ, তা এখন আরও দুর্গম। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ‘গলা চেপে’ ধরতে চাইছে। সু চির রায় ঘোষণার মধ্যে দিয়ে তাদের মনোভাব আরও একবার স্পষ্ট হলো।

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই। মিয়ানমারের ক্ষমতাসীনদের প্রতি যুক্তরাজ্যের আহ্বান থাকবে- আপনারা রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিন, সংলাপ শুরু করুন এবং গণতন্ত্রের পথে আসুন। নির্বাচিত রাজনীতিকদের যথেচ্ছভাবে বন্দি রাখা হলে তা কেবল অস্থিরতাই বাড়িয়ে তুলবে। মিয়ানমারের প্রতিবেশী এবং বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীন অবশ্য ক্ষমতাসীন আদালতের রায়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

সোমবার বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে, আমরা আন্তরিকভাবে চাই মিয়ানমারের ক্রিয়াশীল সব শক্তি যেন দেশে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি স্থাপনে সক্রিয় হয় এবং তাদের নিজেদের মধ্যকার সব মতপার্থক্য ও বিভেদসমূহ সাংবিধান ও আইনী কাঠামোর মধ্যে থেকে সমাধানে সচেষ্ট হয়। যে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র এসেছিল, আমরা তাকে সম্মান করি এবং চাই দেশটির সমাজ-সংস্কৃতির উপযোগী একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যেন সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়।

আন্তর্জাতিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের কর্মরত মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হোরসে সু চির রায়কে ‘হাস্যকর’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘দেশের জনপ্রিয় রাজনীতিকদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করেছে জান্তা। তাই এই রায়ে অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই। মিয়ানমারের ক্ষমতাসীনরা ছাড়া অন্য কেউই এই রায় মেনে নেয়নি।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের সহ প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিউ স্মিথ এ সম্পর্কে বলেন, ‘জান্তা বাহিনী মিয়ানমারের সাধারণ বেসামরিক জনগণকে যে ধারাবাহিক আঘাত করে যাচ্ছে- এই রায় তারই অংশ। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ করে চলেছে সামরিক বাহিনী ও ফর্টিফাই রাইটসের পক্ষ থেকে আমরা অবিলম্বে মিয়ানমারের সব রাজবন্দিদের মুক্তি দাবি করছি।

 

আপনার মতামত লিখুন :