মোবাইল ফোনে প্রেম: অতঃপর সংঘবন্ধ ধর্ষণের স্বীকার কিশোরী

প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১

মাইনুল ইসলাম রাজু, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি: বরগুনার আমতলীতে মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার দুই মাস পরে প্রেমিক কর্তৃক সংঘবন্ধ ধর্ষণের স্বীকার হয়েছেন প্রেমিকা (১৭) বয়সের এক কিশোরী। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল (১২ ডিসেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের কুলাইরচর গ্রামে প্রেমিকের বাড়ীর পাশের একটি ধান ক্ষেতের মধ্যে।

আজ (সোমবার) দুপুরে পুলিশ প্রেমিকসহ অপর সহযোগিকে গ্রেফতার করেছে। ভিকটিমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। ভূক্তভোগী ভিকটিম ও স্থাণীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের ওই ভিকটিম কিশোরীর সাথে গত ২ মাস পূর্বে হলদিয়া ইউনিয়নের কুলাইরচর গ্রামের ইউসুফ মৃধার পুত্র ১ সন্তানের জনক জুয়েল মৃধা (২২) মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর গত ১ মাস পূর্বে উপজেলার গাজীপুর বন্দরে বসে দু’জনের মধ্যে সরাসরি দেখাও হয়। গতকাল সকালে ভিকটিম তার খালাবাড়ী গাজীপুরে বেড়াতে আসে।

যা ভিকটিম তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে তার প্রেমিক জুয়েল মৃধাকে জানায়। এরপর ওই দিন রাত ৮টার দিকে কেনাকাটার নাম করে খালার বাসা থেকে বের হয়ে গাজীপুর বন্দরে গিয়ে ভিকটিম তার প্রেমিক জুয়েল মৃধার সাথে দেখা করেন। এ সময় কৌশলে প্রেমিক জুয়েল প্রেমিকা ভিকটিমকে জুয়েলের বাড়ীতে নেওয়ার জন্য ভিকটিমের ব্যবহৃত মুঠোফোন নিয়ে যায়।

এক পর্যায়ে ভিকটিম তার প্রেমিকের বাড়ীতে যেতে রাজি হয়। তখন প্রেমিক জুয়েল মৃধার সহযোগী একই গ্রামের বশির মোল্লার পুত্র কাওসার মোল্লাকে (১৮) সাথে নিয়ে ভিকটিমকে জুয়েল মৃধার বাড়ী কুলাইচর গ্রামে নিয়ে যায়। ওই দিন রাত অনুমান ১০টার দিকে ভিকটিমকে বাড়ীর পরিবর্তে পার্শ্ববর্তী ধান ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে প্রেমিক জুয়েল ও সহযোগী কাওসার একাধিকবার ধর্ষণ করে বলে ভিকটিম জানায়। পরে রাত ১২- ১টার দিকে সহযোগী ধর্ষক কাওসার ভিকটিমকে গোপনে তাদের বাড়ীতে তার রুমে নিয়ে রাখে। আজ (সোমবার) খুব ভোরে ভিকটিমকে সহযোগী ধর্ষক কাওসারের রুম থেকে বের করে এনে রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হয়। এসময় ভিকটিম কান্না করতে করতে রাস্তা দিয়ে টেপুরা বাজারের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় পথচারী বাবুল শিকদার নামে এক ব্যক্তি ভিকটিমকে কান্না করতে দেখে কৌতুহল বসতঃ কারন জিজ্ঞেষ করে। এসময় ভিকটিম তার সাথে যা যা ঘটেছে তার সবকিছুই খুলে বলেন। সবকিছু শুনে পথচারী বাবুল শিকদার ভিকটিমকে স্থাণীয় ইউপি সদস্য জোসেফ তালুকদারের বাড়ীতে পৌছে দেয়।

পরে স্থাণীয় চৌকিদার পাঠিয়ে প্রেমিক জুয়েল ও সহযোগী কাওসারকে তাদের বাড়ী থেকে ধরে ইউপি সদস্য জোসেফ তালুকদারের বাড়ীতে নিয়ে আসে। প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আমতলী থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত প্রেমিক জুয়েল মৃধা ও সহযোগী কাওসারকে আটক করে এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। পথচারী বাবুল শিকদার মুঠোফোনে বলেন, আজ (সোমবার) সকালে পথিমধ্যে ধর্ষণের স্বীকার হওয়া ভিকটিম মেয়েটিকে কান্না করতে দেখে কারন জিজ্ঞেষ করলে সে আমাকে সকল ঘটনা খুলে বলে। পরে মেয়েটিকে আমি স্থানীয় ইউপি সদস্য জোসেফ তালুকদারের বাড়ীতে পৌছে দেই। গ্রাম পুলিশ মোঃ মামুন মিয়া বলেন, আমি ইউপি সদস্যের নির্দেশে অভিযুক্ত দুই ধর্ষককে তাদের বাড়ী থেকে ধরে এনে পুলিশে সোপর্দ করেছি।

ইউপি সদস্য জোসেফ তালুকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মুঠোফোনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই ভিকটিম কিশোরীকে প্রেমিক জুয়েল মৃধা তাদের বাড়ীতে নিয়ে আসে। পরে কৌশলে ধান ক্ষেতে নিয়ে প্রেমিক জুয়েল ও তার সহযোগী কাওসার জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করেছে বলে ভিকটিম আমাদের কাছে অভিযোগ করেন। আমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রনজিৎ কুমার সরকার মুঠোফোনে বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় আছে। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনা সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় প্রেমিকসহ অপর সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্ষণের স্বীকার ভিকটিমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আগামীকাল ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য কোর্টে আবেদন করা হবে।

 

আপনার মতামত লিখুন :