নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে দেশ সেরা তামিমা

প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১

নারী ও শিশুর প্রতি জেন্ডার ভিত্তিক বৈষম্য ও নির্যাতন প্রতিরোধে বগুড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে কমিউনিটি সচেতনতামূলক সভা করেছেন তামিমা নাছরিন নামে এক নারী। ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনি সর্বমোট ২৩০টি কমিউনিটি সচেতনামূলক সভা করেছেন। একই সঙ্গে ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন সচেতনতার বার্তা। তামিমা জেলা পুলিশ পুলিশ ও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।

তিনি একজন হিউম্যান রাইটস এক্টিভিস্ট এবং উন্নয়নকর্মী। কাজ করছেন ডিসট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলে। বগুড়ার দায়িত্বে রয়েছেন তামিমা। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি পেয়েছেন জাতিসংঘের কান্ট্রি চ্যাম্পিয়ন ভলান্টিয়ার্স অ্যাওয়ার্ড। এছাড়াও পেয়েছেন আরো অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মননা। সম্প্রতি কথা হয় তামিমা নাছরিনের সঙ্গে। ডেইলি বাংলাদেশের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি তুলে ধরেছেন তার বিভিন্ন কার্যক্রম।

বগুড়ার নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক পরিচালনাতেও সহায়তা করছেন তিনি। এমনকি থানার বিভিন্ন পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণসহ কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছেন। এছাড়াও সহিংসতার শিকার বিভিন্ন নারী , শিশু ও কিশোরীদেরকে আইনি সহায়তা পেতে সহযোগিতার পাশাপাশি কাউন্সেলিং বা মনোসামাজিক সেবাও দিয়ে যাচ্ছেন তামিমা ।

তিনি নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধে একটি সহায়ক বুকলেট তৈরি করেছেন। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা , করণীয় ও বর্জনীয় , অপরাধের শাস্তি, রয়েছে বিভিন্ন হেল্প নাইন নাম্বারস, এবং নির্যাতনের শিকার হলে কোথায় গেলে আইনি সহায়তা পাওয়া যাবে তার বিস্তারিত তথ্য। বর্তমানে তার ঐ বুকলেটটি অনেক জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসের মাধ্যমে তা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। বুকলেটে থাকা নম্বরে কল করেও ভুক্তভুগী ব্যক্তি ঘরে বসে সমস্যার কথাগুলো জানাতে পারছেন এবং সহায়তা নিচ্ছেন।

বগুড়ার তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ এবং তাদেরকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তৈরি করে কমিউনিটির জন্য অবদান রাখতে তার ভূমিকা প্রশংসিত। এ জেলার প্রতিটি উপজেলায় তিনি ইয়ুথ ভলান্টিয়ার তৈরি করেছেন। তারা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার ফর জেন্ডার ইকুয়ালিটি নামে পরিচিত ।

ওই সংগঠনের এক শতাধিক তরুণ তাদের নিজ এলাকায় বাল্য বিয়ে, যৌতুক, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, ও অন্যান্য নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে উঠান বৈঠক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে থাকেন । শুধু তাই নয় তারা নিয়মিত বিভিন্ন থানার নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্কের কর্মকর্তাকে বিভিন্ন নির্যাতনের তথ্য প্রদানসহ ভুক্তভোগীকে আইনি সহায়তা পেতে সাহায্য করছেন। এছাড়াও ‘সিইকুয়াল’ নামে তার একটি তরুণ সংগঠন আছে। ঐ সংগঠন নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে ।

আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবসে (৫ ডিসেম্বর,২০২১) তিনি জাতিসংঘের কান্ট্রি চ্যাম্পিয়ন ভলান্টিয়ার্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং কমিউনিটি উন্নয়নে নানাবিদ সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, উদ্ভাবনী, পদক্ষেপ ও সাহসিকতার জন্য তিনি এই সম্মাননা পান।

তামিনা নাছরিন জানান, করোনাকালীন (২০২০ সাল) নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তিনি আয়োজন করেছিলেন আন্তর্জাতিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন। তার ক্যাম্পেইনে বিশ্বের ১৪টি দেশ থেকে ২৫০ জন পেশাজীবী এবং তরুণ নেতারা অংশগ্রহণ করেছিলেন। নারী ও শিশুর প্রতি জেন্ডার ভিত্তিক বৈষম্য ও নির্যাতন মুক্ত একটি পৃথিবী দেখতে চান তামিমা।

আপনার মতামত লিখুন :