নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতের মামলায়: রাঙ্গাবালীতে পুরুষ শূন্য গ্রাম

প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১

সজ্ঞিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : গ্রেফতার আতঙ্কে জড়িতরা গ্রামছাড়া, অনেক বাড়ি তালাবদ্ধ। এরিমধ্যে চরআন্ডা ঘটনার মূলহোতা মজিবরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতার পর শতাধিক আসামি করে দুই প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তিনটি এবং নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে আরও একটি মামলা দায়েরের পরই গা-ঢাকা দিয়েছে ওই ইউনিয়নের নয়ারচর ও চরআন্ডা গ্রামের অসংখ্য মানুষ। বুধবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রাম দু’টি এখন নিস্তব্ধ। পুরুষশূন্যতো হয়েছেই, কেউ কেউ পরিবার পরিজন নিয়েও গা ঢাকা দিয়েছে। সূত্রের তথ্যমতে, মামলার খবর পেয়ে ঘটনায় জড়িতরা আত্মগোপনে। অনেকে পার্শ্ববর্তী জেলা ভোলা এবং উপজেলা গলাচিপাসহ বিভিন্ন এলাকায় পালিয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন (ইউপি) পরবর্তী সহিংসতা ও একজন নিহতের ঘটনায় চারটি মামলার পর পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দুইটি গ্রাম অনেকটাই পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, পুরো গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রেফতার আতঙ্কে অনেক বাড়িঘর ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছে ঘটনায় জড়িত পুরুষ সদস্যরা। কোন বাড়িতে আবার নেই কেউই। ঘর রয়েছে তালাবদ্ধ।এলাকাবাসী বলছে, নির্বাচনকালীন এবং পরবর্তীতেও কিছুদিন গ্রামগঞ্জে আমেজ থাকে। কিন্তু এ ঘটনার কারণে পুরো চরমোন্তাজে বিজয়ী প্রার্থীদের নিয়েও কর্মী-সমর্থকদের কোন উৎসব-আমেজ নেই। এই পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হয় তাও বলা যাচ্ছে না। চরমোন্তাজ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজান বলেন, ‘এলাকার পরিবেশ শান্ত। সাধারণ মানুষ আছে। যারা সহিংসতার ঘটনায় জড়িত তারা কেউ এলাকায় নেই। পুরুষরা পালিয়েছে, মহিলারা আছে।

আমরা ডিউটি করছি। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান করছি।’মূল ঘটনার দিন গত রোববার ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণার পর পরাজিত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা এবং পুনরায় ভোট গণনার দাবি তুলে নয়ারচর ও আন্ডারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ ভোটগ্রহণকারী সংশ্লিষ্টদের ঘন্টার পর ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। দুইটি কেন্দ্রের পরাজিত দুই ইউপি সদস্যের কর্মী-সমর্থকরা এ ঘটনা ঘটালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং অবরুদ্ধদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েক দফায় ৩৭ রাউন্ড গুলি ছোড়তে বাধ্য হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে আব্দুল খালেক হোসেন নামের একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি পরাজিত ইউপি সদস্য জিয়াউরের সমর্থক ছিলেন।

পুলিশ জানায়, বেআইনি জনতাবদ্ধে দেশী অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ভোট কেন্দ্রে পুলিশের কাজে বাঁধা, হামলা চালিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের আহত করা, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ও ক্ষতি সাধনের অপরাধে ঘটনার পরদিন সোমবার রাতে রাঙ্গাবালী থানায় নয়ারচর ৮ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. আজমল হোসাইন দুইটি এবং আন্ডারচর ৯ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মেহেদী হাসান একটি মামলা করেন। অপরদিকে সহিংসতায় নিহত আব্দুল খালেক হোসেনের স্ত্রী ফাহিমা বেগম বাদী হয়ে স্বামীকে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে অজ্ঞাত আসামি দিয়ে আরও একটি মামলা করেন। এ চারটি মামলায় মোট ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে ১৩০০ থেকে ১৭০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। পুলিশ বলছে, আন্ডারচর কেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনার মূলহোতা মজিবরকে গলাচিপা থেকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার গলাচিপা আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ও একজন নিহতের এ ঘটনায় বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম চরমোন্তাজে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। রাঙ্গাবালী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, চার মামলার আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে চরআন্ডা ঘটনার মূলহোতা মজিবরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, অনাকাঙ্খিত এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।

 

আপনার মতামত লিখুন :