নতুন স্বপ্নে পথচলা: বিদায় একুশ, স্বাগত ২০২২

প্রকাশিত : ১ জানুয়ারি ২০২২

বিদায় নিলো ২০২১, স্বাগত ২০২২! পাওয়া না পাওয়ার নানা কাব্য নিয়ে মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেলো আরও একটি বছর। শনিবার (১ জানুয়ারি) ভোরে পুরাতনের গ্লানি ভুলে পূর্বাকাশে উদিত হবে নতুন সূর্য। পুরানো সকল আনন্দ-বেদনা কালের মহাস্রোতে হবে ইতিহাস। বিদায়ী খ্রিষ্টীয় বছর অনেকের জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ অতীতের পথ ধরেই সাজাতে হয় বর্তমান। আর সেজন্যই অতীতকে মনে রাখতে হয়। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০২১ একটি ঘটনাবহুল বছর।

ব্যক্তি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা চ্যালেঞ্জ ও উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে বছরটি। তাই সেসব বিষয়কে সামনে রেখেই গুছিয়ে নিতে হবে আগামী বছর। বাংলাদেশের মানুষের কাছে ২০২১ একটি অবিস্মরণীয় বছর। ৩০ লাখ তাজা প্রাণ ও লাখ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রবের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপিত হয়েছে এ বছরই। একই সঙ্গে পালিত হয়েছে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনের নানা কর্মসূচিও। দেশের মানুষ এই দুইয়ে নানা আয়োজনে মেতে ছিল পুরো বছরই।

সারাবিশ্বের মতো ২০২১ সালে বাংলাদেশেও সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল করোনা মহামারি। শেষে এসে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দাপটের মধ্যে বাংলাদেশেও দৈনিক শনাক্ত বাড়ছে। এখন পর্যন্ত দেশে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭ জন। এ অবস্থায় বুস্টার ডোজ দেওয়ার পাশাপাশি করোনার টিকাদান কর্মসূচি চলছে। এতকিছুর মধ্যেও মানুষের জীবনযাপনে অনেকটাই স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্টিলের কাঠামো (স্প্যান) বসে এ বছেরর ১০ ডিসেম্বর। এদিন ৪১তম স্প্যানের জোড়া লাগানোর মাধ্যমে পদ্মার দুই পাড়ও যুক্ত হয়। এতে দৃশ্যমান হয় প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর মূল সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।

২০২২ সালের প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা হবে, করোনা ভাইরাসের সর্বগ্রাসী থাবা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়া। ২০২০ সালের মার্চের ৮ তারিখ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ একটা কঠিন সময় পার করেছে। ২০২০ সালের শেষে মৃত্যুর সংখ্যা এবং সংক্রমণের হার খানিকটা কমে আসলেও ২০২১ সালের মার্চ থেকে সেটা পুনরায় বাড়তে শুরু করে।

করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এবং প্রায় ১৫ লাখ ৮৪ হাজারেরও বেশি লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা, স্বাস্থ্যবিধি মানতে সাধারণ মানুষকে ক্রমবর্ধমান হারে সচেতন করতে মিডিয়ার সক্রিয় ভূমিকা, সরকারিভাবে ব্যাপক হারে বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা এবং শ্রমজীবী মানুষের শরীরের নিজস্ব রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ অন্য দেশের তুলনামূলক বিচারে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল।

তবে এখনো করোনার হুমকি আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে নানাভাবে ব্যাহত করছে। তাই আমাদের সবার ঐকান্তিক প্রত্যাশা হচ্ছে ২০২২ সালে আমরা পুরোপুরি করোনামুক্ত হয়ে একটি সুন্দর-স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবো। সকল অনিশ্চিয়তা কাটিয়ে, মৃত্যু জয় আবার স্বাভাবিক হবে জীবন-এটাই ২০২২ সালের কাছে চাওয়া। তাই নতুন এ বছর হোক উত্তরণের, কালের যাত্রায় এগিয়ে চলার। নতুনের আবাহনে জেগে উঠুক সমগ্র দেশ, বিশ্ব। বয়ে আনুক সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।

 

আপনার মতামত লিখুন :