ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনা হতে পারে

প্রকাশিত : ৪ জানুয়ারি ২০২২

গত বছরের ৬ জানুয়ারি মার্কিন সংসদ ভবনে তার সমর্থকদের হামলার সময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কী করতে ব্যর্থ হয়েছেন সে সম্পর্কে নতুন বিবরণের একটি বিশাল তালিকা প্রকাশের মধ্যেই একজন প্রাক্তন ফেডারেল প্রসিকিউটর (মার্কিন অ্যাটর্নি) বারবারা ম্যাককুয়েড সোমবার বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সম্ভবত ‘রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনা হতে পারে।

ম্যাককুয়েড ওই হামলার সময় ট্রাম্প কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন তার উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা এমন ১৮৭ মিনিট পেয়েছি যখন তিনি বসেছিলেন এবং কিছুই করেননি, যদিও তিনি জানতেন যে এই সহিংসতা ঘটতে চলেছে। এর কারণ কি এটি একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ ছিল?’

ম্যাককুয়েডে আরও বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতারণা করার ষড়যন্ত্রের দিকেও তাকাতে পারি – এর মানে সরকারের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা – রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্র পর্যন্ত, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বের জোর করে বিরোধিতা করার ষড়যন্ত্র। এবং তাই আমি মনে করি এই সমস্ত সম্ভাব্য অপরাধগুলিও বিবেচনায় রয়েছে’।

৬ জানুয়ারী ঘটনার তদন্তকারী হাউস সিলেক্ট কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান চেনি এবং প্যানেলের সভাপতিত্বকারী রিপাবলিকান বেনি থম্পসন (ডি-মিস) উভয়ই টিভিতে ইউএস ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতা দেখে ট্রাম্পের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে আলোচনা করেছেন হোয়াইট হাউসে।

থম্পসন রবিবার এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’-এ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বলা হয়েছিল, আপনাকে আপনার লোকদের ক্যাপিটল ছেড়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলতে হবে। কিন্তু এই সাধারণ বিবৃতিটি দিতে তার ১৮৭ মিনিটের বেশি সময় লেগেছে। এতে কিছু একটা গণ্ডগোল আছে’।

চেনি এবিসি নিউজের ‘দিস উইক’ অনুষ্ঠানে বলেছেন, ট্রাম্প টিভি পর্দায় সহিংসতা দেখে উত্তেজিত হয়েছিলেন এবং সহিংসতা থামাতে তাকে হস্তক্ষেপ করতে বারবার তার নিজের পরিবারের সদস্যদের করা অনুরোধও শোনেননি’।

চেনি রবিবার এবিসির জর্জ স্টেফানোপোলোসকে বলেছেন, ‘আমরা জানি যে তিনি ওভাল অফিসের পাশে ডাইনিং রুমে বসে ছিলেন, তার স্টাফরা লোকদের থামতে বলার জন্য টেলিভিশনে যাওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করছিল’।

চেনি বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য রয়েছে যে তার মেয়ে ইভানকা অন্তত দুবার তাকে এই সহিংসতা বন্ধ করতে তার সমর্থকদের প্রতি আহবান জানানোর জন্য অনুরোধ করতে গিয়েছিল’।

ওদিকে, সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র এবং ইভানকা ট্রাম্পকে তদন্তের জেরে সমন পাঠানো হয়েছে। নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল সোমবার এই সমন জারি করেন৷ অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের অফিস জানিয়েছে, ট্রাম্প ও তার সন্তানদের মালিকানাধীন কোম্পানির সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ সম্পর্কিত তদন্তের জন্য জবানবন্দি নিতে ও সংশ্লিষ্ট দলিলপত্র খতিয়ে দেখতে এই সমন জারি করা হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তার কোম্পানির সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণে ইচ্ছাকৃতভাবে কম অথবা বেশি দেখানো হয়েছে এই সন্দেহে ফৌজদারি তদন্ত চলছে। ট্রাম্পের আইনজীবীরা এই সমন রদ করার ব্যাপারে চেষ্টা করছেন।

গত দুই বছর ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল জেমস এই তদন্ত চালিয়ে আসছেন। সম্পত্তির দাম বেশি দেখিয়ে ঋণ সুবিধা নেয়া এবং কম দেখিয়ে আয়কর কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের কোম্পানির বিরুদ্ধে।

এদিকে ট্রাম্পের আইনজীবীরা এই সমন রদ করার জন্য গত সোমবার আদালতে আবেদন করেছেন। তারা এই সমনের ঘটনাকে ‘সংবিধানবিরোধী’ বলছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এই সমনের মাধ্যমে ট্রাম্পের জবানবন্দি নিয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে অন্য মামলায় ব্যবহার করবেন এই আশঙ্কাও তারা করছেন।

ট্রাম্পের আইনজীবীদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল জেমস জানান, ট্রাম্প ও তার পরিবার যতই বিখ্যাত হন না কেন, আর সবার মতই তাদের নিয়ম অনুযায়ীই চলতে হবে। রদ করার আবেদন তদন্তকে দেরি করানোর একটি কৌশল মাত্র।

আপনার মতামত লিখুন :