মুদি দোকানদার থেকে সিরিয়াল কিলার ছদ্মবেশী বাউল শিল্পী: র‌্যাব

প্রকাশিত : ১৪ জানুয়ারি ২০২২

‘ভাঙা তরী ছেড়া পাল’ গানের বাউল মডেল হেলাল হোসেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এর পর তিনি ছিলেন মুদি দোকানি। পরবর্তী সময়ে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে এলাকায় তার কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে হয়ে উঠেন সিরিয়াল কিলার।

আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় র‌্যাব।
র‌্যাব জানায়, আনুমানিক ৬ মাস আগে এক ব্যক্তি ইউটিউবে প্রচারিত একটি গানের বাউল মডেল সম্পর্কে র‌্যাবের কাছে তথ্য প্রদান করেন যে, ওই মডেল সম্ভবত বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ছায়া তদন্ত শুরু হয়। একপর্যায়ে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে র‌্যাব নিশ্চিত হয়। ফলশ্রুতিতে হেলালকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, হেলাল ২০০১ সালে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি। পাশাপাশি তার নামে আরও ২টি হত্যা মামলা রয়েছে। এগুলো হলো-১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলা।

এর মধ্যে হেলালের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে দায়েরকৃত চুরির মামলায় ২০১৫ সালে জামিন প্রাপ্তির দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলে সে সুকৌশলে এলাকা ত্যাগ করে এবং ফেরারি জীবন যাপন শুরু করে। প্রথমে সে বগুড়া থেকে ট্রেনে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসে। পরবর্তী সময় কমলাপুর থেকে ট্রেনে সে চট্টগ্রামে চলে যায় এবং সেখানকার আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থান করে। সেখান থেকে ট্রেনযোগে সিলেটের শাহজালাল মাজারে চলে যায়। সিলেটে গিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরও কিছুদিন অবস্থান করে।

র‌্যাব জানায়, বিভিন্ন সময়ে হেলাল দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করতেন। তিনি কিশোরগঞ্জ ভৈরব রেলস্টেশনে নাম-ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করেন। আনুমানিক ৫ বছর আগে হেলাল নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশ ওরফে গামছা পলাশের একটি গানের শুটিং চলাকালে রেললাইনের পাশে বাউল গান গাইছিল। তখন শুটিংয়ের একজন ব্যক্তি তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে বহুল জনপ্রিয় ‘ভাঙা তরী ছেড়া পাল’ শিরোনামের গানের বাউল মডেল হিসেবে তাকে দেখা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হেলাল ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়েরকৃত একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে গ্রেফতার হন। একই সঙ্গে ২০০১ সালের বিদ্যুৎ হত্যা মামলার বিচারকার্যও চলমান থাকে। ২০১৫ সালেই ওই চুরির মামলায় জামিনে মুক্ত হন এবং একই দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় বিজ্ঞ আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। এ ছাড়া ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রয়েছে। বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে হেলাল হোসেনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

আপনার মতামত লিখুন :