তিন মেয়ের ইচ্ছাপূরণে সংসার ছাড়া মা, স্বামীর বিয়ে ঠেকাতে অনশনে

প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি ২০২২

দ্বিতীয় বিয়ে করছেন স্বামী। এমন খবরে বিয়ে ঠেকাতে শ্বশুরবাড়িতে অনসনে বসেন তিন মেয়ের উচ্চাভিলাসী চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে সংসার ছাড়া প্রথম স্ত্রী। তিনদিন ধরেই শ্বশুরবাড়িতে অনশনে রয়েছেন তিনি। ঘটনাটি মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের। অনশনকারী নারীর স্বামীর নাম রহম আলী দেওয়ান। ৫০ বছর বয়সী রহম আলী উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের ঝিটকা উজানপাড়ার আব্দুল আলী দেওয়ানের ছেলে। তাদের তিন মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে দুজনের বিয়ে হয়েছে, আরেকজন দশম শ্রেণির ছাত্রী।

জানা গেছে, ১৭ জানুয়ারি মধ্য রাতে উজানপাড়ায় গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে রহম আলীর দ্বিতীয় বিয়ের আয়োজন করা হয়। তবে সেখানে হাজির হন প্রথম স্ত্রী। পরে বিয়ে পণ্ড হলে ওই রাতেই রহম আলীর বাড়িতে অনশনে বসেন ওই গৃহবধূ। খবর পেয়ে ২০ জানুয়ারি রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হরিরামপুর থানা পুলিশ। তবে রহম আলী এরই মধ্যে ওই নারীকে দুই দফা তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন বলে এ নারী জানান।

স্থানীয়রা জানায়, গত বছরের ২০ এপ্রিল পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীকে তালাক দেন রহম আলী। আইনিভাবে তালাকটি সম্পন্ন না হওয়ায় একই বছরের ৬ মে পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তালাক নোটিশ পাঠান স্বামী রহম আলী। কিন্তু তালাক নোটিশটি গ্রহণ না করে এলাকার লোকজনকে বিষয়টি মীমাংসার জন্য জানান ওই গৃহবধূ। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। ফলে উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করে।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় আমার দুই মেয়ের জামাইদের পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছি; যা আমার স্বামীকে তখনও জানাইনি। এছাড়া কয়েক বছরে আমার মেয়েদের উচ্চাভিলাসী চাহিদা পূরণেও অনেক টাকা খরচ হয়। এ জন্যই টাকা-পয়সার হিসাব নিয়ে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি শুরু হতে থাকে।

তিনি বলেন, আর্থিক বিষয় দেখিয়ে একতরফাভাবে আমাকে তালাক দেন স্বামী। আমি স্বামীর সংসার করতে চাই। এলাকার কয়েকজন মাতব্বর বিষয়টি সমাধানে গড়িমসি করছেন। মূলত তাদের কারণেই আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। এখন তারা আমার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করাতে চান। আমি যাওয়ার পর বিয়ে বন্ধ করে স্বামীকে ফেলে তার সহযোগীরা পালিয়ে যান।

একই বাড়িতে বসবাসকারী রহম আলীর আপন চাচাতো বড় ভাই হারেজ দেওয়ানের স্ত্রী বিলকিস বেগম জানান, মেয়েদের ভোগবিলাসিতার জন্যই আমার জা বেহিসাবি খরচ করেছেন। এটাকে কেন্দ্র করে এবং সমাজের কিছু কুচক্রী মানুষের কারণে তিনি সংসার ছাড়া। এ বিষয়ে সমাজের মাতব্বর জাফর আলী জানান, ৩১ জানুয়ারি শিবালয় উপজেলায় ইউপি নির্বাচন। নির্বাচনের দু-একদিন পর উপজেলা চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রহম আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে রহম আলী দেওয়ানের ছোট মেয়ে বলেন, আমার মা বাবার জমি লিখে নিয়েছেন। বাবার সঙ্গে আমরা আছি। হরিরামপুর থানার ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যান। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আপনার মতামত লিখুন :