খানসামায় আলুর বাম্পার ফলন হলেও দামে হতাশ চাষিরা

প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারি ২০২২

গত বছর অধিক দামে আলু বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় এবার দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কৃষকরা উৎসাহিত হয়ে দ্বিগুণ আলু চাষ করেন। কিন্তু আলুর ফলন গত মৌসুমের চেয়ে ভালো হলেও দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা। চাষাবাদে খরচ বৃদ্ধি পেলেও মাঠে কিংবা হাটে মিলছে না কাক্সিক্ষত দাম। আলুর বাজারে দামে ধস নামায় চাষিদের মুখে হাসি নেই। বাজার দরে হতাশা কাজ করছে তাদের মধ্যে।

তবে কৃষকরা যদি দেশীয় পদ্ধতিতে বাড়িতেই ৩-৪ মাস আলু সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন, তাহলে লাভবান হবেন বলে জানায় কৃষি বিভাগ। গত বছর চাষিরা এসময় প্রতিকেজি আলু মাঠেই বিক্রি করেছিলেন ২০-২৫ টাকা দরে। এবার সেই আলু ক্ষেতে বিক্রি হচ্ছে ৬-৭ টাকা কেজি দরে। যার উৎপাদন খরচই হচ্ছে কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা দরে। তারপরও মাঠে ক্রেতা নেই।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমি। কিন্তু আলু চাষ হয়েছে ৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। আলুর ফলনও ভাল হয়েছে। পাকেরহাটের আলু চাষি আব্দুল মজিদ বলেন, আমি এবার ৩ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। গত বছর আলুর ভালো দাম পেয়ে লাভবান হয়েছিলাম। কিন্তু এবার আলু ৬ টাকা দরে বিক্রি করতে হলো। তাও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এবারে আমি আলু চাষ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

আরেক চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, এবারে কীটনাশকের দাম অনেক বেশি ছিল। এবার আলুর দামও অনেক কম। এতে অনেক লোকসান হবে। এক মণ আলু বিক্রি করে একটা কামলা খরচ দিতে হয়। আমরা এবার আলু চাষ করে লোকসানে পরে গেলাম। ভেড়ভেড়ীর আলু চাষি মাজেদুর বলেন, গত বছর আলুর দাম বেশি ছিল এবং কম ফলনেও ভালো লাভ হয়। এবার ফলন বেশি হলেও লোকসান গুণতে হচ্ছে। লাভ তো দূরের কথা আসলও তুলতে পারছি না। কম দামে আলু বিক্রি করে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এরপরও নগদ টাকার ক্রেতা নেই। এমতাবস্থায় সরকার যদি আলুচাষিদের দিকে না তাকায় তাহলে আমরা আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলব।

চাষিরা আরো জানান, এক বিঘা জমিতে আলু উৎপাদন করতে কমপক্ষে ৩০-৩২ হাজার টাকা খরচ হয়। গড়ে এক বিঘা জমিতে ৭৫ মণ আলু উৎপাদন হয়। এই হিসাবে প্রতিকেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১০-১২ টাকা। সাধারণত মাটিতে একবার আলু রোপণ করলে একবার ফলন পাওয়া গেলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। চাষিরা এবার দুই বার আলু রোপণ করে ফলন পাচ্ছেন মাত্র একবার। আগাম আলু রোপণের কয়েকদিন পড়ে বর্ষার শেষের বৃষ্টিতে রোপণকৃত আলু মাঠেই পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। লাভের আশায় সেই জমিতে পুনরায় আলু রোপণ করেন চাষিরা। সে কারণে উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পায় চাষিদের।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন, এখন কৃষকরা আলু তুলছে। এবার আলুর ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে দাম কম পাচ্ছেন কৃষকরা। খুচরা বাজারে আলুর যে দাম পাইকারি বাজারে তার থেকেও অনেক কম। কৃষি অধিদফতর মনে করছে, এই আলু যদি আরও ১০-১৫ দিন আগে তোলা হতো তাহলে কৃষকরা দাম মোটামুটি ভালো পেতেন। তবে সামনের দিকে দাম কিছুটা বাড়লে চাষিদের লোকসানে পড়তে হবে না। চাষিদের যে কোনো পরামর্শের জন্য কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে রয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন :