নির্বাচনে জিতেও সাধারণ সম্পাদকের পদ হারাচ্ছেন জায়েদ খান! মন্ত্রণালয়ে চিঠি

প্রকাশিত : ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

চিত্রনায়িকা নিপুণের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাতিল হতে পারে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের সাধারণ সম্পাদকের পদ। এই অভিনেতার বিরুদ্ধে ভোট কেনার অভিযোগ তুলে তার পদ বাতিলের জন্য আপিল বোর্ডে লিখিত আবেদন করেছিলেন নিপুণ। একই অভিযোগে পদ বাতিলের আবেদন করা হয়েছিল মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী পদে জয় পাওয়া চুন্নুর বিরুদ্ধেও।

সেই অভিযোগ ও আবেদন আমলে নিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান ও কার্যনির্বাহী সদস্য চুন্নুর প্রার্থিতা বাতিলের দিকনির্দেশনা চেয়েছেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর দেওয়া এক চিঠিতে তিনি এই দিকনির্দেশনা চেয়েছেন।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় নিবন্ধিত একটি সংগঠন। সোহানুর রহমান সোহানের সেই চিঠি পাওয়ার পর তারা জানিয়েছে, ১৯৬১ সালের সেচ্ছাসেবী সংস্থা নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৬১-এ বলা আছে, এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় নিবন্ধিত কোনো সংস্থা বা সংগঠনের নির্বাচন নিয়ে তদন্তে অনিয়ম পাওয়া গেলে কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। গঠনতন্ত্রে যদি সমাধান পাওয়া না যায়, সে ক্ষেত্রে আইনের দ্বারস্থ হওয়া যাবে।

বুধবার ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রকনুল হক সাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে নির্বাচনের আপিল বোর্ড চূড়ান্ত ক্ষমতাপ্রাপ্ত। অর্থাৎ এখন আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপরেই নির্ভর করছে জায়েদ খান ও চুন্নুর পদ।

এ বিষয়ে তিনবারের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেছেন, ‘নিপুণের আবেদনের পর আপিল বোর্ড পুণরায় ভোট গণনা করে দেখেছে নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষিত ফলাফল ঠিক আছে। আমিই জিতেছি। নিপুণ তার পরাজয় মেনে নিয়ে স্বাক্ষরও করে গেছেন। তাই নির্ধারিত সময়ের পরে কোনো আবেদন মন্ত্রণালয়ে যেতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়া।’

এদিকে সমিতির গঠনতন্ত্রে শপথ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা না থাকায় জায়েদ খান ইতোমধ্যে তার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। সোমবার এফডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সে কথা জানিয়েও দিয়েছেন। বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্রের কোথাও শপথের কথা উল্লেখ নেই। আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ী কমিটি নতুন কমিটিকে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেবে। যেহেতু আমি নিজেই সাধারণ সম্পাদক, তাই আমারটা আমি বুঝে নিয়েছি।’

তবে শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালনকারী অভিনেতা ও সরকারি কর্মকর্তা পীরজাদা শহীদুল হারুন বলছেন, ‘যেহেতু সাধারণ সম্পাদক পদটি নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে, তাই ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে একটু সময় লাগবে।’

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচন। সেদিন থেকেই জায়েদ খানের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ তুলে আসছিলেন তার বিপক্ষ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ আক্তার। এরপর ভোট শেষে পরদিন ভোররাতে ঘোষণা হয় ফলাফল। তাতে দেখা যায়, জায়েদ খানের কাছে ১৩ ভোটে হেরে গেছেন নিপুণ।

কিন্তু এই পরাজয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন অভিনেত্রী। তিনি শনিবার দুপুরে পুনরায় ভোট গণনার জন্য আপিল বোর্ডে লিখিত আবেদন করেন। সেই আবেদন পর্যালোচনা করে এবং পুনরায় ভোট গণনার পর এদিন সন্ধ্যায় আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান জানিয়ে দেন, ফলাফল ঠিক আছে। জায়েদ খানই জিতেছেন।

তবুও নিজের পরাজয় নিয়ে সন্দেহ যায়নি নিপুণের। রবিবার তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আবারও জায়েদের বিরুদ্ধে ভোট কেনার অভিযোগ তোলেন। পাশাপাশি একটি ভিডিও দেখান, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে, জায়েদ খান এবং তার প্যানেলের কার্যনির্বাহী সদস্য প্রার্থী চুন্নু টাকা দিয়ে ভোট কিনেছেন। ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করেছেন। বিশেষ করে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে ফের নির্বাচন দেওয়ার জোর দাবি জানান।

এছাড়া নিপুণ ওই সংবাদ সম্মেলনে কিছু স্ক্রিনশট প্রকাশ করেন। যেখানে জায়েদ খানের সঙ্গে কোনো এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কথোপকথন উঠে এসেছে।

এদিকে, ভোটের দিন থেকেই টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন জায়েদ খান। এরপর সোমবার এফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করেও তিনি একই দাবি করেন। এছাড়া ফাঁস হওয়া স্ক্রিনশটের ব্যাপারে নায়ক বলেন, ওগুলো সুপার এডিট করে বানানো। এভাবে গত কয়েকদিন ধরেই জায়েদ-নিপুণের চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। শেষপর্যন্ত এ লড়াইয়ে কে জেতেন সেটাই দেখার।

আপনার মতামত লিখুন :