মানব কল্যাণে ইসলামের দিক-নির্দেশনা

প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল ২০২২

আজ যা কিছু নতুন কাল তা পুরাতন আর চতুর্পাশে যা কিছু দেখি সবকিছুই মহান আল্লাহ্ পাকের অসীম নেয়ামত, অপার সৃষ্টিলীলা। অসম্ভবকে সম্ভব আর অবাস্তবকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি কুণ্ঠিত হন না কোন সময়। নতুন নতুন সৃজনশীল অনুপ্রোরণা মানুষের মাঝে দান করেই ক্ষান্ত হন না; তার পরিপূর্ণ বিকাশ সবটুকু মমতা ঠেলে দেন তিনি। আর তাঁর সেই অসীম নেয়ামত সবাই ভোগ করতে পারে না। সৃষ্টির বৈচিত্র্যময় স্বভাব সহিষ্ণু মননশীলতা তো তিনিই দান করেছেন আর আবেগকে করেছেন পূর্ণ উদ্যোমী গতিময়। যেমন, ঝর্ণাকে দিয়েছেন দূর্দান্ত আর অবিরাম গতিতে ছুটে চলার শক্তি। সেই পরমকল্যাণময় মহান আল্লাহ্ পাকের কুদরতি চরণ মোবারকের লাখো কোটি চুম্বন আর বিনম্র ভক্তি আমাদের চলার পথকে শঙ্কামুক্ত রাখার জন্য।

এই নশ্বর পৃথিবীকে কত সুশৃঙ্খল আর নানা বিভাজনে সাজিয়েছেন মহান আল্লাহ্ পাক। ধর্মীয় অনুভূতি হৃদয়ে জাগ্রত করার মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষা দিয়েছেন। জীবনের ছক এঁকে দিয়েছেন, দেখিয়েছেন সহজ সত্য সুন্দর পথ, দেখিয়েছেন মানব কল্যাণে ইসলামী দিক নির্দেশনা। ইসলামে অন্যের ব্যথায় সমব্যথী হওয়া এবং পরের বিপদে সহযোগীতার হাত প্রসারিত করা একটি মহৎ গুণ। এক ধরনের নেকীর কাজ। হিতৈষী মনোভাব ও সহমর্মিতার গুণ ছাড়া মানবিকতা ও মহানুভবতার বিকাশ পূর্ণতা পায় না। মানবতা যে আজ শুধু বেচাকেনা হচ্ছে, তাই নয়। আমরা আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত হাজারও দেখতেছি মহান আল্লাহ্ ও তার রাসূলকে রাজি-খুশির করার লক্ষ্যে খোদাভীরু অনেক ন্যায়পরায়ণ বান্দাগণ নিঃস্বার্থে আপরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। রোগে বিছানায় পড়ে যন্ত্রণায় চটপট করা লোকটাকেও সেবা-যতœ দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে দিয়েছেন। অভাব-অনটন, বেকারত্ব লোকটাকেও কর্মস্থান দিয়েছেন। রাস্তায় পড়ে থাকা বস্ত্রহীন হাজারও লোককে খাদ্য-বস্ত্র দিয়েছেন।

অপরদিকে আমরা হাজারও দেখতেছি ইসলামিক আর্দেশ নীতির বাহিরের লোকেরা মাত্রাতিরিক্ত তৃপ্তি নিয়ে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছেন। অথচ তার বাড়ির বুয়ার অভুক্ত সন্তানদের মুখে ওঠে না একটি মৌসুমী ফলও। ক্ষুদ্রে মাছির লঘু পদভার পড়ামাত্র সুডৌল আপেল, রসে টইটুম্বর আঙ্গুর ও টসটসে কমলা ওরা প্রায়শই ফেলে দিচ্ছে ডাস্টবিনে। অথচ এরা পঁচা ও উচ্ছিষ্ট ফল খাওয়ার জন্য ইতর প্রাণীর সঙ্গে যুদ্ধ করে ডাস্টবিনে। ফ্যাশন বদলের সঙ্গে সঙ্গেই আবার মেয়ের শীতবস্ত্র আর গ্রীষ্মের পোশাক বদল হয়। অথচ অদূরের গাঁয়েই কি-না শীতবস্ত্রের অভাবে গরীবের প্রাণ যায়। এমনটা বিবেকহীন বা মানবতাহীনের পরিচয় ইসলামে নেই। অমানবের চেয়ে মানব শ্রেষ্ঠ কেন? প্রাণের কারণে? কেবল বুদ্ধির কারণে? মোটেও না। প্রাণের বৈশিষ্ট্যে মানুষ ও জীব-জন্তু প্রায় অভিন্ন। মানুষ বুদ্ধিমান জীব বলে অন্য সব জীবজন্তু একেবারে বুদ্ধিহীন নয়। বরং বুদ্ধির সঙ্গে বিবেক এবং আপন চাহিদার সঙ্গে মানবিকতার সংশ্লেষই অন্য সব জীব-জন্তুর ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে। ইসলাম এ কারণে মানব সমাজে এমন বৈষম্য ও প্রভেদের কোনো সুযোগ রাখেনি। ইসলাম মানুষকে সর্বোচ্চ মানবিকতা, পরহিতৈষণা, সহমর্মিতা ও মহানুভবতার শিক্ষা দিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাঁর নবীকে প্রেরণ দয়া ও সহমর্মিতার প্রতীক হিসেবে।

অনাহারীর কষ্টের ভাগিদার হতে এবং জনম-দুঃখী বান্দার দুঃখে সমব্যথী হতে আল্লাহ তাআলা রমযানের সিয়াম ফরয করেছেন। দুঃখীর অভাব মোচনে যাকাত ফরয ও সাদাকুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। একই উদ্দেশে সালাত, সিয়াম ইত্যাদির ফিদইয়া ও লে‘আনের বিধান এবং কসম ইত্যাদির কাফফার বিধান প্রবর্তন করেছেন। দান-সদকা ও অন্যের জন্য খরচে উদ্বুদ্ধ করে অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। মানব সমাজকল্যাণে ইসলামী ধারণা সর্ম্পকে কুরআনের নিন্মোক্ত আয়াতটি প্রায় সময় দিক নির্দেশনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

“সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আতœীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।” -সূরা বাকারা আয়াত নং ১৭৭।

মানবতা ও মানুষের কল্যাণে ইসলামী শিক্ষা ইসলাম ধর্মের প্রধান গ্রন্থ কুরআন শরীফে, মুসলমানরা বিশ্বাস করেন যে মানবজাতির জন্য দ্বারা যেটি অবতীর্ণ হয়েছে, লিপিবদ্ধ হয়েছে। রাসূল (সা:) এর জীবন এবং তার কর্মের মধ্যে এই শিক্ষাগুলো পরিলক্ষিত হয়। মুসলমানদের কাছে, ইসলাম হচ্ছে তা যা কুরআনে পালন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং যেভাবে রাসূল (সা:) তার জীবন অতিবাহিত করেছেন। তাই, ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত যেকোনো বিষয় বুঝতে হলে এই দুইটির (কুরআন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম) এর উপর নির্ভর করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার আদেশ ও রাসূল (সা:) এর দেখানোর কর্ম পরিলক্ষিত একমাত্রই মানব কল্যাণ দিক- নির্দেশক।

আপনার মতামত লিখুন :