সবার নজর বেঁচে যাওয়া নবজাতকের দিকে: অবুঝ ভাই-বোনের খবর নেয়নি কেউ

প্রকাশিত : ১৮ জুলাই ২০২২

ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু এবং মৃত মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক কন্যাশিশুটি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’৷ ঘটনার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া এই নবজাতক।

ইতোমধ্যে তার চিকিৎসা ও ভরণপোষণসহ সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন ত্রিশালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হকও শিশুটির খোঁজখবর রাখছেন এবং পাশে থাকার কথা বলেছেন। শুধু তাই নয়, শিশুটিকে দত্তক নিতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন অনেকে। যদিও তাকে দত্তক দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তার স্বজনরা।

সবার নজর ওই নবজাতকের দিকে। এদিকে হঠাৎ করে মা-বাবা ও বোন হারিয়ে এতিম হওয়া ওই পরিবারের অন্য দুই শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে। এ দুই ভাই-বোনের খোঁজ কেউ নিচ্ছে না।

জানা গেছে, নিহত জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু ও মা সুফিয়া আক্তার দুজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। সদ্যজাত নবজাতক ছাড়াও নিহত জাহাঙ্গীর-রত্না দম্পতির রয়েছে ১০ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত ও সাত বছর বয়সী ছেলে এবাদত। জান্নাত একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

স্বজন ও স্থানীয়রা বলছেন, দাদা-দাদি দুজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ওই তিন শিশুর দেখাশোনা এবং ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা অনেকটাই অসম্ভব। এমন অবস্থায় পরিবারটির দিকে, বিশেষ করে এতিম ছেলে-মেয়েদের দিকে সরকার কিংবা বিত্তবানরা যদি একটু সুনজর দিতেন, তাহলে হয়তো তাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর হতো।

গতকাল শনিবার (১৬ জুলাই) বেলা পৌনে ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্টভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা। প্রসবের নির্ধারিত সময় অতিক্রম হওয়ায় আলট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েছিলেন তারা। সেখান থেকে ফেরার পথে ট্রাকচাপায় ঘটনাস্থলেই ওই তিনজন নিহত হন।

তবে ওই সময় অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। নবজাতকটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় পুলিশ ও আশপাশের লোকজন। তারা শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখানে নেওয়ার পর জানা যায় জীবিত আছে নবজাতক কন্যাটি।

সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতকটিকে ময়মনসিংহ সদরের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নগরীর লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ওই নবজাতক। এখন শিশুটি শঙ্কামুক্ত আছে এবং আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ভাঙা হাড় জোড়া লাগাসহ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

আপনার মতামত লিখুন :