জাতীয় শোক দিবস: ব্যানার-পোস্টারে আত্মপ্রচারবিহীন যুবলীগ

প্রকাশিত : ১৪ আগস্ট ২০২২

১৫ আগস্ট, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস। গোটা জাতির সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো, যার মধ্যে রয়েছে যুবলীগও। তবে শোক দিবস ঘিরে তৈরি করা অনেক ব্যানার-পোস্টারই ছেয়ে থাকতে দেখা যায় সংগঠনের নেতাদের মুখশ্রীতে। শোক পালনের ছদ্মবেশে তা যেন পরিণত হয় আত্মপ্রচারের হাতিয়ারে। তার জন্য সমালোচনার তীরেও বিদ্ধ হতে হয় বৈকি।

তবে গতবছর থেকে যুবলীগের ক্ষেত্রে সেই চিত্রটি পাল্টে গেছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই আত্মপ্রচারের সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে। এবারে যুবলীগ কিংবা সংগঠনের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে তৈরি করা কোনো ফেস্টুন, ব্যানার বা পোস্টারেই নেই কোনো নেতার ছবি। বঙ্গবন্ধুসহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শহিদদের ছবি দিয়েই শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে ফেস্টুন-ব্যানার-পোস্টারে। পূর্বে দেখা গেছে, সাধারণত বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শোক দিবসের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস এলেই আত্মপ্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন পাড়া-মহল্লার, ওয়ার্ড, থানা কমিটির নেতারা। জাতির জনক ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ছবির তুলনায় নিজেদের বড় বড় ছবি ব্যবহার করে বানানো সেসব ব্যানার-পোস্টারে ছবি ব্যবহারের নির্দেশনা না মেনেই আত্মপ্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তারা।

অথচ দলীয় নেতাকর্মীদের আত্মপ্রচারণা ঠেকাতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছবি ব্যবহারের উপর সংযত হতে একটি নির্দেশনা জারি করা আছে সেই ২০১৫ সালে। নির্দেশনায় বলা রয়েছে, ‘পোস্টার-ব্যানার, বিলবোর্ড ও লিফলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছাড়া কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না।’ ওই নির্দেশনার পরও গত কয়েক বছরে থামেনি আত্মপ্রচার। তাই গতবছর ৮ আগস্ট যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যানার-পোস্টার সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেয়। সেখানে বলা হয়, যেকোনো ধরনের ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন প্রকাশের ক্ষেত্রে সংগঠনের চেয়ারম্যান-সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি ছাড়া প্রকাশ ও প্রচার বাঞ্ছনীয় নয়। এবার এসব নির্দেশনা মেনেই শোকের মাসে দলীয় ও ব্যাক্তিগত ব্যানার-পোস্টার করেছে যুবলীগ।

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ প্রতিটি ইউনিটের দলীয় ব্যানারে যারা ১৫ আগস্টে শহিদ হয়েছেন, তাদের ছবি দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। কোনো ব্যানার ও পোস্টারে সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদকের বা কোনো ইউনিট প্রধানের ছবি ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলাসহ অন্য কোনো ইউনিটের পোস্টারেও সংস্লিষ্ট সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের ছবি ছাড়াই শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত ব্যানারেও তারা নিজেদের ছবি ব্যবহার করেননি। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ব্যানার-পোস্টারগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজল নাঈম ১৫ আগস্ট কালো রাতে নিহত সকল শহিদের ছবি দিয়ে পোস্টারের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সেখানে দলীয় কোনো নেতার ছবি নেই।

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার যুবলীগ নেতারাও আত্মপ্রচারণার বাইরে গিয়েই শহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক রাসেল সরকার, খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম পলাশ সহ জেলা যুবলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে নেই কারও ব্যক্তিগত ছবি। এ বিষয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, দীর্ঘ দিনের চলে আসা অচলায়তন ভেঙে যুবলীগকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছি। ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারের দিকে আমরা বিশেষ নজর রাখছি। এরই মধ্যে আমরা সারাদেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে একটি নির্দেশিকা দিয়েছি।

নির্দেশনার কথা জানিয়ে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টার করার সময় অবশ্যই প্রটোকল অনুযায়ী করতে হবে।আগস্ট মাসের ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে শহিদদের ছবি ছাড়া অন্য কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। তবে সংগঠনের লোগো, নাম, পদবী ব্যবহার করতে পারবেন। এবার এই নির্দেশনা মেনেই সবাই ব্যানার-পোস্টার করেছেন। কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :