যদি পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যায় তাহলে মারা যাবে ৫শ’কোটি মানুষ!

প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট ২০২২

বিশ্বে পূর্ণমাত্রায় পারমাণবিক যুদ্ধ হলে প্রাণহানি ছাড়াও এর পরবর্তী দুর্ভিক্ষে মারা যাবে পাঁচশ’ কোটি মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স ইউনিভার্সিটির এক গবেষণার তথ্যমতে, পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণের কারণে বায়ুমণ্ডলে সূর্যের আলো আটকে দেয়া ছাইয়ের যে আস্তরণ পড়বে, তাতে বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে।

নেচার ফুড জার্নাল তাদের সমীক্ষা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পারমাণবিক যুদ্ধে জড়ালে এর ফলস্বরূপ ছাই ও কালি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে সূর্যের আলো আটকাবে। এতে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং অনাহারে ৫০০ কোটিরও বেশি মানুষ মারা যাবে। যদিও পারমাণবিক যুদ্ধ নিয়ে বেশিরভাগ জল্পনা-কল্পনা বোমা হামলার ভয়াবহতা থেকে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দিয়ে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা যায়, প্রকৃত দুর্ভোগ আসবে সংঘাতের পরের বছরগুলোতে, যখন সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়বে এবং স্থানীয় অবকাঠামো ধ্বংস ও খাদ্যশস্য উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে।

পারমাণবিক যুদ্ধের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের মতো প্রধান উৎপাদকদের খাদ্য সরবরাহের সক্ষমতা ৯০ শতাংশ হ্রাস পাবে। এর ফলে পারমাণবিক যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত নয়, এমন দেশগুলোও মানবিক বিপর্যয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া- এ দুই প্রধান রপ্তানিকারক দেশের খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। যদি পারমাণবিক যুদ্ধের প্রভাবে তারা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত নাও হয়, তবে আমদানি নির্ভরশীল দেশগুলো পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

জলবায়ু বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও সমীক্ষাটির সহ-লেখক অ্যালান রোবক বলেছেন, তথ্যগুলো আমাদের একটি বার্তাই দিচ্ছে, তা হলো- যে কোনো মূল্যে অবশ্যই পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকাতে হবে। তা ঘটতে দেয়া যাবে না। এর আগে ১৮১৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট তামবোরা এবং ১৭৮৩ সালে আইসল্যান্ডের লাকির মতো বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পরে বায়ুমণ্ডলে ছাই প্রবেশে জলবায়ুতে মারাত্মক পরিবর্তন আসে। যার ফলে দুর্ভিক্ষ এবং রাজনৈতিক উত্থান ঘটেছিল।

প্রকৃতপক্ষে, এ জলবায়ু বিজ্ঞানী উদ্বিগ্ন যে, বায়ুমণ্ডলকে বিষাক্ত কণা দিয়ে ভরাট করলে অপ্রত্যাশিত ফলাফল হতে পারে এবং এটি পৃথিবীকে আরও জলবায়ু সংক্রান্ত অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, সামরিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তার পরই অবস্থান রাশিয়ার। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স ২০২২ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১২ লাখ ৮১ হাজার ৯০০ জন। রিজার্ভ আছে ৮ লাখ ১ হাজার ২০০ সৈন্য। যুদ্ধবিমান ১৩ হাজার ৩৬২টি, ট্যাংক ৫ হাজার ৮৮৪টি, যুদ্ধজাহাজ ৪১৫টি। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়ার সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১০ লাখ ১৩ হাজার ৬২৮ জন। রিজার্ভ আছে ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ সৈন্য। যুদ্ধবিমান ৩ হাজার ৯১৪টি, ট্যাংক ২০ হাজার ৩০০টি, যুদ্ধজাহাজ ৩৫২টি।

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান আছে ১৩ হাজার ৩৬২টি। ট্যাংক আছে ৫ হাজার ৮৮৪টি। বিভিন্ন প্রতিরক্ষা গণমাধ্যমের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, রাশিয়ার যুদ্ধবিমান রয়েছে ৪ হাজার ১৭৩টি। রাশিয়ার ট্যাংক আছে ১২ হাজার ৪২০টি, আর কামান রয়েছে ৭ হাজার ৫৭১টি। এসব হিসাব মাথায় নিলে বলাই যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক দিক থেকে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে রাশিয়ার তুলনায়। তবে সাবেক সোভিয়েত আমলের কথিত গোপন প্রকল্পের বিষয় মাথায় নিলে এতটা নিশ্চিত হওয়া ঢের কঠিন। স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার সেই হিসাব–নিকাশের সত্যিকারের সুরাহা কখনোই হয়নি!

আপনার মতামত লিখুন :