ভারতের কয়েকটি প্রদেশে বন্যা-ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১

প্রকাশিত : ২১ আগস্ট ২০২২

ভারতের হিমাচল, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা ও উত্তরাখণ্ডে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে হিমাচলে অন্তত ২২ জন রয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন একই পরিবারে আট সদস্য। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১০ জন। রাজ্যটির মান্দিতে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ছয়জন। মানালির উপকমিশনার অরিন্দম চৌধুরী বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, মান্দিতে নিখোঁজরা সবাই সম্ভবত মারা গেছেন।

উত্তরাখণ্ডে মারা গেছেন চারজন। নিখোঁজ রয়েছেন ১০ জন। এ রাজ্যে ব্যাপক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে এবং নদীতীরবর্তী এলাকা ও ভেঙে যাওয়া সেতুর কাছাকাছি অঞ্চল থেকে প্রায় ১ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উড়িষ্যায় চারজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, বন্যার কবলে পড়া মহানদী অববাহিকা অঞ্চলের পাঁচ শতাধিক গ্রাম থেকে কমপক্ষে চার লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ভারী বৃষ্টিতে ঝাড়খণ্ডের বেশ কয়েকটি জেলায় বহু গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে এবং নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। এ রাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পশ্চিম সিংভূমে একটি মাটির বাড়ির দেয়াল ভেঙে চাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ দিকে আজ রোববার সকাল থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। বন্যার কারণে তীর্থযাত্রা স্থগিত করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবারেও মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

গতকাল হিমাচলের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক সুদেশ কুমার মুখতা জানিয়েছেন, রাজ্যটিতে সব মিলিয়ে ৩৬টি প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেছে। রাজ্যের প্রায় ৭৪৩টি সড়কে চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া, মানালি–চণ্ডীগড় মহাসড়ক এবং শিমলা চণ্ডীগড় মহাসড়কেও যোগাযোগ ব্যাহত হয়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রবল বর্ষণ এবং ভূমিধসের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিমাচল। রাজ্যের উদ্ধারকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট স্রোতে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছে এবং এ সময়ই ওই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ভূমিধসের ঘটনা যেসব এলাকায় ঘটেছে সেসব এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালু রয়েছে। হিমাচলের যোগিন্দর নগরের সঙ্গে পাঞ্জাবের পাঠানকোটের রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়েছে গেছে।

অপরদিকে, জম্মু–কাশ্মীর প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট স্রোতে একটি মাটির তৈরি ঘর ধসে পড়ে ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই দুই শিশুর ১ জনের বয়স ৩ বছর এবং অন্য শিশুর বয়স মাত্র ২ মাস। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই রাজ্যগুলোতে ব্যাপক মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের কারণে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে এমন ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার ঘটনা বেশ বেড়ে গিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে চরমভাবাপন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের মতো ভারতেও বাঁধ, বন উজাড় এবং বিভিন্ন অপরিণামদর্শী উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এসব দুর্যোগে মানুষের মৃত্যুর হারকেও বাড়িয়ে তুলছে।

আপনার মতামত লিখুন :