ন্যায্যমূল্যে পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবী

প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট ২০২২

আজ ২২ আগস্ট রোজ সোমবার সকাল ১১ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ কর্তৃক আয়োজিত ‘ন্যায্য মূল্যে পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার’ শীর্ষক এক নাগরিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় ঢাকা ওয়াসার (টেকনিক্যাল) পরিচালক এ.কে.এম শহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন ১৪৮ বছর আগে ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ শুরু হয়। ঐ সময়ে যে পাইপলাইন ছিল তা এখনও অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যমান রয়েছে। বর্তমান দৈনিক চাহিদার বীপরিতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৬৫ কোটি লিটার পানি।

ডিএমএ চালু করায় বর্তমানে ঢাকা শহরের অনেক এলাকায় সুপেয় নিরবিচ্ছিন্ন পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। আমাদের লক্ষ মাত্রা ১৪৫টি ডিএমএ পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে ২৪ ঘন্টায় নাগরিকরা নিরাপদ সুপেয় পানি পাবে। এখনও অধিকাংশ ডিএমএ করা যাচ্ছে না, পর্যাপ্ত অর্থের অভাব এবং সিটি কর্পোরেশনের অ-সহযোগিতা এবং অনৈতিক অর্থ দাবী করার কারনে। এক কিলোমিটার রাস্তা কাটতে সিটি কর্পোরেশন’কে দিতে হয় ৩ কোটি টাকা। এক প্রশ্নের জবাবে পদ্মার পানি কেন পাওয়া যাচ্ছে না এর উত্তরে তিনি বলেন অর্থের অভাবে এবং দুর্নিতীর অভিযোগের বেড়াজালের কারনে এই প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নাই। তারপরেও এখনও পদ্মা থেকে দৈনিক ৩ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পানি উৎপাদনে কেমিক্যালের উচ্চ মূল্য এবং ব্যয়বৃদ্ধি অন্যতম কারন। তবে সরকারের ভতুর্কিী যদি অব্যাহত থাকে তাহলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না।

অতিথি বক্তা জনাব আবু নাছের খান পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’এর সভাপতি বলেন, আমরা প্রাকৃতিক পানি সরবরাহ না করে ভূ-গর্ভস্থ পানিতে কেন গেলাম ? তা খতিয়ে দেখা দরকার। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী না করে আমরা আমেরিকান পলিসিতে গেলাম। ওয়াসার এমডি’র বেতনও বিশ^ব্যাংক নির্ধারণ করে। নাগরিক সমাজের উচিত ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সমালোচনা করা। সু-পেয় পানি পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। তাই সুপেয় পানি পাওয়া দাবিতে আন্দোলন আরো জোড়দার করা উচিত।

ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বলেন, বর্তমান সময়ে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়া দরকার কর্তৃপক্ষ সরকার নাগরিকের কেন সুপেয় পানি দিতে পারছে না। ওয়াসার এমডি পরিবর্তন বা তার বেতন নিয়ে আলোচনা কোন সমাধান হতে পারে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে যাকেই দায়িত্ব দেওয়া হোক সেই ব্যার্থ হবে। যতক্ষন না পর্যন্ত আমলা তন্ত্রিক জটিলতা দূর করা যায়।

সুজনের কু-অর্ডিনেটর নাছের আমিন বলেন, ওয়াসার সু-শাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার। উন্নয়ন বলতেই আমরা নাগরিক সমস্যা সমাধান মনে করি না। লেবার পার্টির মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওয়াসার এমডিও বেতন এবং তার চাকরির মেয়াদ ইস্যু তৈরী করে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পানির অপর নাম জীবন। তাই প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপদ পানি ন্যায্য মূল্যে পাওয়া এবং নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ পাওয়া মৌলিক অধিকার। আমাদের সংগঠন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ঢাকা ওয়াসা ভবনের সামনে ২০ শতাংশ পানির মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত করে। সেখানে আমাদের দাবি ছিল মূল্যবৃদ্ধি সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাছাড়া বর্তমান পানি অনেক ক্ষেত্রে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা এবং মানহীন।

পরবর্তীতে কুয়াশা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে সমস্যা সমাধানে আমাদের সাথে একটি বৈঠক করে। সেখানে কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায় বর্তমানে এক হাজার লিটার পানি উৎপাদন করতে তাদের খরচ হয় ২৫ টাকা। কিন্তু গ্রাহক দেয় ১৫ টাকা, বাকি ১০ টাকা সরকার নিয়মিত ভর্তুকি দিয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট ঋণদাতাদের চাপ এবং মানুষের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভর্তুকির টাকা ধনীরাও ভোগ করছে তাই এটি সমন্বয় করা ছাড়া ওয়াশার করার কিছু নাই। তবে সরকার যদি ভর্তুকি অব্যাহত রাখে তাহলে দাম বাড়ানো প্রয়োজন হবে না। এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয় আমাদের আশ্বস্ত করেন দাম যাতে বৃদ্ধি করতে না হয় তার জন্য তিনিও সরকারকে অনুরোধ করবেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম গত ভোট সভায় এলাকাভিত্তিক শ্রেণীবিভেদ অনুযায়ী পানির মূল্য নির্ধারণ করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এবং দুর্গন্ধযুক্ত পানি পাওয়ার জন্য তিনি স্বাধীনতার পূর্বে স্থাপিত লিখেযুক্ত পায়ে এবং গ্রাহকদের অসচেতনতার কি অন্যতম দায়ী বলে মনে করেন। এবং আমাদেরকে আশ্বস্ত করেন নতুন প্রকল্প চলমান রয়েছে যা ২০২৩ সালের মধ্যে সারা ঢাকার পুরাতন পায়ে পরিবর্তন করে নতুন সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হবে। আমরা আশা করব আগামী বছরের মধ্যে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এবং সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

১৯৬৩ সালে গঠিত ঢাকা ওয়াসা আর বর্তমান ২০২২ সালের ঢাকা ওয়াসা এক করে দেখার কোন সুযোগ নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭১ সালেও ঢাকা ওয়াসার ১৫ লক্ষ ২৩ হাজার আবাসিক গ্রাহকের বিপরীতে পানির চাহিদা ছিল ২৮ কোটি লিটার। কিন্তু সরবরাহ করা হতো মাত্র ১৬ কোটি লিটার। যার ফলে অধিকাংশ নাগরীকে রাতের বেলায় কল চেপে পানি সংগ্রহ করতে হতো। বর্তমানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কে দুই সিটিতে বিভক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া সিটি কর্পোরেশনের আয়তন বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে এখন দৈনিক তিন কোটি লোকের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি আরো দৈনিক ঢাকা আগমন ও প্রচ্ছেদ প্রায় ৫০ লক্ষ জনগোষ্ঠীকে পানি সরবরাহ করতে হচ্ছে একমাত্র ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে। চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ শত কোটি লিটারে। সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় কাছাকাছি, বেশ কিছু নতুন নতুন প্রকল্প যুক্ত হওয়ায় পানির সমস্যা খুব একটা না থাকলেও রাজধানীর অভ্যন্তরীণ সরবরাহ লাইন ত্রুটির কারণে নাগরিকরা সুপ্রেয় পানির সুফল ভোগ করছে না।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন এ্যাড. আবু বক্কর সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট রাশিদ বেগম, সংগঠনের সদস্য- শাজাহান মিয়া, ছাব্বির হাজরা প্রমুখ।

আপনার মতামত লিখুন :