রাবনাবাদ নদী পাড়ের মানুষের আর্তনাদ শুনছে না কেউ

প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট ২০২২

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।। বৃষ্টি হলে ওরা কাঁদে, জোয়ার হলে ভাসে। প্রতিটি ঝড়-জলোচ্ছাসে ভেসে যায় একটু একটু করে তাদের স্বপ্ন। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। এমন চিত্র পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া, ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নের রাবনাবাদ নদী পাড়ের গ্রামের মানুষের। ¯্রােতের টানে মানুষ ভেসে বেড়ালেও তাদের আর্তনাদ কেউ শুনছে না। সরেজমিনে দুর্গত এলাকা ঘুরে শোনা যায় মানুষের কষ্টের কথা। এসব এলাকার মানুষ বেঁচে আছে ঠিক যেন দুর্ভিক্ষের ছবির মতো।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার রাবনাবাদ নদী পাড়ের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ কোথাও কোথাও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আবার ঢেউয়ের তোড়ে অনেকের বসতঘর ভেঙ্গে ভেসে গেছে । ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জায়গায় কিংবা বেরিবাঁধের উপর। ধানখালী ও চাম্পপুর ইউনিয়নের দেবপুর ও নিশানবাড়িয়া এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। মানুষ এখন বসবাসের অবস্থাও হারিয়ে ফেলছে। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। কৃষকরা বীজতলা করতে পারছে না। এমন কী সন্তানদের স্কুল মাদ্রাসায় যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। অমাবস্যা-পূর্ণিমা আসলেই জোয়ারের পানিতে ভাসতে থাকে ওইসব গ্রামের মানুষ। তবে পায়রা বন্দর অধিগ্রহণ করায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে নতুন করে বাঁধ নির্মাণ কিংবা পুরনো বেড়িবাঁধ মেরামত করছে না। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পরেছে কৃষকরা এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

লালুয়া ইউনিয়নের রাবনাবাদ নদীর পাড়ে চর চান্দুপাড়া গ্রামের গৃহবধু রওশনারা বেগম বলেন, জোয়ারের পানিতে বসতবাড়ি তলইয়া যায়। এসময় ঘরে থাকা তো দুরে কথা রান্নাবান্নও বন্ধ হইয়া যায়। ধানখালী ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামের ৭০ উর্ধ্বো বৃদ্ধ মো.বজলু হাওলাদার বলেন, গত জোয়ারের পানিতে ঘরের মালামাল ভাসাইয়া লইয়া গ্যাছে। আমি বুড়া মানু দিন রাইত চহির উপর উড্ডা বইয়া থাকছি। কবে যে বানডা ঠিক হইবে। কইতে পারিনা। একই গ্রামের শাহিনুর বেগম বলেন, জোয়ারের পানি বাড়লেই বাড়ি-ঘর ডুইব্যা যায়, ভাডার সময় হুগায়।

ধানখালী ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা গাজী রাইসুল ইসলাম রাজিব বলেন, অমাবস্যা-পূর্ণিমা আসলেই বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে মানুষের ঘড়-বাড়ি, ফসলি ক্ষেত তলিয়ে যায়। এর ফলে এসব গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে।
ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদার জানান, দেবপুরের বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত থাকায় তার ইউনিয়নে নিশানবাড়িয়া, পাচজুনিয়া, লোন্দা গ্রাম জোয়ারের পানিতে ভাসে। ভাটার সময় পানি কমে গেলেও ফের জোয়ারের সময় ডুবে থাকে। এ তিন গ্রামের কৃষকের চাষাবাদ তো দূরের কথা, তাদের দূর্ভোগের সীমা নাই।

লালুয়ার চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, রাবনাবাদপাড়ের দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত রয়েছে। মানুষের বাড়িঘর সম্পদ সব অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা পারভীন সীমা বলেন, তিনি রাবনাবাদ নদী পাড়ের বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। এসময় পানি বন্দী গ্রামের ১৭৬০ পরিবারের মাঝে নারী উন্নয়ন ফোরামের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার, পানি,স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরন ঔষধ বিতরণ করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

আপনার মতামত লিখুন :