লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে আহম্মদ শাহ (৩ বছর ২ মাস) নামের এক শিশুকে হত্যার পর বসতঘরের খাটের নিচে মাটিতে পুতে রাখা হয়। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সৎ মা পুলিশের কাছে হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সোমবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার উত্তর দরবেশপুর গ্রামের চৌকিদার বাড়ি থেকে মাটি খুঁড়ে পুলিশ তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় সৎ মা কোহিনুর বেগমকে (৩৫) আটক করা হয়েছে। শিশু হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ওই বাড়িতে উৎসুক লোকজন জড়ো হয়। তাঁরা মায়ের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এদিকে কী কারণে, কীভাবে শিশুকে হত্যা করা হয়েছে তা বিশদভাবে জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত আহম্মদ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার জিয়ানগর গ্রামের শাহ মিরান হাবিব উল্যার ছেলে। আটক কোহিনুর রামগঞ্জ উপজেলার উত্তর দরবেশপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের মেয়ে। কোহিনুর মিরানের দ্বিতীয় স্ত্রী।
থানা পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, কোহিনুর ৩ দিন আগে স্বামীর বাড়ি (হাজীগঞ্জ) থেকে আহম্মদকে নিয়ে রামগঞ্জে বাবার বাড়িতে আসে। ছেলেকে সঙ্গে নেওয়ার বিষয়টি বাবা মিরানের জানা ছিল না। পরে তিনি কোহিনুর) একা স্বামীর বাড়িতে ফিরেন। কিন্তু বাবা ছেলের হদিস পাচ্ছিলেন না। পরে মিরান রবিবার (২৮ আগস্ট) হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনকে অবগত করেন। এসময় ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে পুলিশ মিরানের বাড়ির আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেন। সেখানে দেখা যায়, শিশু আহম্মদ সৎ মা কোহিনুরের সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। কিন্তু ফেরার সময় কোহিনুর একাই এসেছে। পরে পুলিশ কোহিনুরকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে কোহিনুর শিশুকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে। জানায়, বাবার বাড়িতে নিয়ে তাকে হত্যার পর ঘরের মধ্যে খাটের নিচে পুঁতে রাখা হয়েছে। এরপর কোহিনুরকে নিয়ে রামগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় উত্তর দরবেশপুর গ্রামের বাড়ির ঘরে পুঁতে রাখা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ জানায়, শিশু নিখোঁজ হওয়ার জিডির সূত্র ধরে সৎ মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে রামগঞ্জ থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
লক্ষ্মীপুর সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর সার্কেল) আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদি সৎ মায়ের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে বলেন, পেটে লাথি দিলে শিশুটি মারা যায়। পরে দা দিয়ে মাটি খুঁড়ে খাটের নিচেই মরদেহ পুঁতে রাখা হয়। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত কোহিনুর পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। কী কারণে, কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বিষয়টি নিয়ে থানায় হত্যা মামলা হবে।