সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানত হিন্দু এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করতে চাই যে, তার সরকার ধর্মনিরপেক্ষতাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা হলে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেয়া হয়।

ভারত সফরের আগে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ এজেন্সি এএনআইয়ের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে উগ্রবাদ শুধু তাঁর দেশে সীমাবদ্ধ ছিল না, কারণ ভারতসহ অনেক দেশ এটি প্রত্যক্ষ করছে। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান উগ্রবাদের একটি কারণ হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যা ‘আজকাল খুবই বাজে’ হয়ে উঠেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতদিন আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা সব সময় এটাকে গুরুত্ব দেই এবং আমি সবসময় তাদের (সংখ্যালঘুদের) বলি যে, আপনারা আমাদের নাগরিক। দেশের প্রতি আপনাদেরও দায়বদ্ধতা আছে। তবে মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা ঘটলেও সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিই। এটা কখনো কখনো হয়, এটি ঘটেছে, এটি খুব অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি কিন্তু আপনি জানেন যে এটি কেবল বাংলাদেশ নয়, এমনকি ভারতেও কখনো কখনো সংখ্যালঘুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সংখ্যালঘুর ওপর হামলা ও শত্রুতার খবর পাওয়া গেছে। কিছু প্রতিবেদনে দুর্গাপূজার প্যান্ডেল বা উপাসনালয়ে হামলার কথা বলা হয়েছে। তবে হিন্দু সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, দেশগুলোকে উদারতা দেখানো জরুরি। তিনি বলেন, আমি মনে করি যে উভয় দেশেরই উদারতা দেখানো উচিত, আপনি জানেন বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এবং আমাদের এখানে অনেক ধর্ম রয়েছে। আর এখানে ধর্মের সম্প্রীতি খুব বেশি। তাই একটি বা দুটি ঘটনা যখন ঘটে তখনই… বিশেষ করে আমার দল… আমার দলের লোকেরা, তারা অনেক বেশি সচেতন এবং আমার সরকারও। আমরা অবিলম্বে ব্যবস্থা নিই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্লগার এবং উগ্রবাদী সম্প্রদায়ের ভূমিকা সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, এটি কাম্য নয় যে লোকেরা একে অপরকে আঘাত করার জন্য কিছু লিখবে এবং আরো বলেছেন যে তার সরকার এ জাতীয় যে কোনো কার্যকলাপ রোধ করার চেষ্টা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখুন উগ্রবাদ সর্বত্র। এমনকি ভারতে বা অন্যান্য দেশেও যদি আপনি দেখেন, বিশ্বের অনেক দেশেই আপনি এটি খুঁজে পেতে পারেন। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে এটি আজকাল খুব… খুব বাজে হয়ে গেছে। কেউ কেউ মাঝে মাঝে কিছু লেখেন। এমনকি কখনো কখনো এটি ব্লগাররা নয়, অন্য ধর্মেরও নয়… কখনো কখনো তারা লেখেন এবং তারপরে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়াও হয়, কিন্তু আমরা এটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আমরা কখনই এটি সমর্থন করি না। প্রতিটি ধর্ম আছে, তাদের ধর্ম সঠিকভাবে পালন করার অধিকার আছে এবং একজনকে এমন কিছু বলা উচিত নয়, যা অন্য ধর্মকে আঘাত করে।

গত মাসে, বাংলাদেশের কিছু অংশে সহিংসতার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা সংখ্যালঘু হিন্দুদের উদ্দেশে বলেছিলেন, তাদেরও একই অধিকার রয়েছে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের মন্দির, দোকানপাট ও বাড়িঘর ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনা সংবাদ সংস্থাকে বলেন, কিছু ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশের ঐতিহ্য হচ্ছে- এখানে সব ধর্মের মানুষ সব উৎসবে অংশ নেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই একসঙ্গে উৎসব উদযাপন করি একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মতো করে, এমনকি আপনি বাংলাদেশে দুর্গাপূজার সময় দেখতে পাবেন যে, অনেক জায়গায় সাধারণ মানুষ একসঙ্গে তা উদযাপন করে। তাই ধর্মের সম্প্রীতি ঠিকই আছে, কিন্তু এখন এখানে সেখানে কিছু ঘটনা ঘটলেও আমাদের সরকার অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাচারের ব্যাপকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, বিষয়টি আলোচনাধীন রয়েছে এবং সমস্যার মাত্রাও অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, তবে এখনও মাঝেমধ্যে কিছু ঘটনা ঘটে। তাই আমরা ভারতের সাথে আলোচনা করি যে তাদের একটু ধৈর্য দেখানো উচিত এবং এই গবাদিপশু পাচার করা উচিত নয়।

আপনি ইতোমধ্যেই জানেন যে আজকাল আমাদের দেশে, এখন আমরা ভারতীয় গরুর উপর খুব বেশি নির্ভরশীল নই। আমরা নিজেরাই স্বনির্ভর হচ্ছি। এখানে গবাদি পশু বাড়ছে কারণ আমাদের এটি দরকার। তবে কিছু সীমান্ত চোরাচালান হয়। তাই দুই পক্ষের সীমান্ত বাহিনী একসঙ্গে বসে। যে কোনও ঘটনা ঘটুক, তারা পতাকা বৈঠকে বসে এবং আলোচনা করে। সুতরাং , আমরা আশ্বস্ত করব যে এটি কমবে, এটি হওয়া উচিত নয়।

শেখ হাসিনা সোমবার গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সফরে ভারতে যাচ্ছেন। তাঁর চার দিনের ভারত সফরকে উভয় দেশেই দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির মধ্যে সময়ের পরীক্ষিত সহযোগিতা আরও বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়েও আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

খবর বাসস

আপনার মতামত লিখুন :